সিরাজগঞ্জে বিএনপির ১৬৭৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৭


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, ২রা ডিসেম্বর ২০২২


সিরাজগঞ্জে বিএনপির ১৬৭৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৭
ফাইল ছবি

সিরাজগঞ্জের ১১ থানায় আ.লীগের পৃথক পৃথক মামলায় বিএনপির ১৬৭৪ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪ জন নেতাকর্মীর নাম। 


এদিকে এ মামালায় ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির ৭ জন নেতাকর্মী। বিশেষ করে মামলায় পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন বিএনপির অজ্ঞাত আসামীরা। 


সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের ভাষ্যমতে জানা যায়,এসব মামলা দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা।


রায়গঞ্জ থানার ওসি আসিফ মোহাম্মাদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে ধানগড়ায় রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল আকন্দ বাদী হয়ে রাতেই ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।


তাড়াশ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার তালম ইউনিয়নের চার মাথা আকবর আলী বাজারে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোজ্জামেল হক মজনু বাদী হয়ে রাতেই ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ১২০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।


সলঙ্গা থানার ওসি জানান, মঙ্গলবার রাতে সলঙ্গার আঙ্গারু বাজারে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে রাতেই মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির ১৮জন নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।


উল্লাপাড়া থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার পূর্ণিমাগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ বাদী হয়ে রাতেই মামলা করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৮০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।


এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান,মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে কেজির মোড়ে তাদের উপর হামলা ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় রাতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আফাজ উদ্দিন ব্যাপারী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৪০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।


বেলকুচি থানার ওসি তাজমিরুল রহমান জানান,রোববার রাতে সাংগঠনিক কার্যক্রম শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার আদাচাকি এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা হয়। এ ঘটনায় সোমবার পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ উৎস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।


চৌহালী থানার ওসি হারুন অর রশিদ জানান,২৫ নভেম্বর রাতে উপজেলার দত্তকান্দি বাজারে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সভা করছিল। সেখানে সরকার বিরোধী বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মারপিট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির ১জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


কাজিপুর থানার ওসি শ্যামল কুমার দত্ত জানান,সোমবার রাতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আব্দুর রশিদ বিলু বাদী হয়ে মঙ্গলবার থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির একজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


শাহজাদপুর থানার (ওসি)নজরুল ইসলাম মৃধা জানান, ২২ নভেম্বর রাতে শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর এবং হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে।


সিরাজগঞ্জ থানার ওসি (অপারেশন)সুমন কুমার দাস জানান,২২ নভেম্বর রাতে সদরের কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা,ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। উল্লেখিত ওয়ার্ডের সভাপতি জাকির হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।


এ ছাড়াও কামারখন্দ থানার ওসি নুরনবী প্রধান জানান,১৮ নভেম্বর দুপুরে বিএনপি নেতারা সমাবেশ শেষে ফেরার পথে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কামারখন্দ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম রেজা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। মামলায় ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুইজন বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।


এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ গায়েবী মামলা করে পুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। তবে মামলা দেখে আর বিএনপি ভয় পায়না। এবার সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথেই ফয়সালা করবে। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

জেবি/ আরএইচ/