ভারতকে কাঁদিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়


Janobani

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, ৮ই ডিসেম্বর ২০২২


ভারতকে কাঁদিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
উইকেট নিয়ে সাকিবের উল্লাস

প্রায় ৭ বছর পর বাংলাদেশে খেলতে এসে লজ্জাজনকভাবে সিরিজ হারলো ভারত। সর্বশেষ ২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। এরপর বাংলাদেশে আর দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজ খেলতে আসেনি টিন ইন্ডিয়া।


প্রথম ওয়ানডেতে জয় পাওয়ার পর আজ বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতকে ২৭২ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে ২৬৬ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস। ১৮ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৬৩ রান করা ভারত যখন ম্যাচের হাল ছেড়ে দিয়েছিল, তখন শ্রেয়াস-প্যাটেল জুটি ভারতের হয়ে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে। এই জুটির দারুণ ব্যাটিংয়ে বেশ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দুই ব্যাটারের দারুণ ব্যাটিংয়ে ১০৭ রানের জুটি পায় ভারত। কিন্তু ৩৫তম ওভারে মেহেদি মিরাজের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের কাছে তালুবন্দি হন ৮২ রান করা শ্রেয়াস। 


পরের ওভারে এবাদতের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক লিটন দাস। অধিনায়কের বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখিয়েছেন এবাদত। পরের ওভারেই আরেক সেট ব্যাটার অক্ষর প্যাটেলকে আউট করেন তিনি। পরে চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফেরা হয়নি ভারতের। ৪৩তম ওভারে শার্দুল ঠাকুরের উইকেটটি নিয়ে ভারতকে আরও চাপে ফেলে সাকিব। পরের ওভারেই আবার উইকেট নেন এবাদত। আজকের ম্যাচে নিজের তিন নম্বর উইকেট হিসেবে দীপক চাহারকে সাজঘরে ফেরান তিনি। এরপর ভারতের নবম উইকেটটি নিজের করে নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মোহাম্মদ সিরাজকে বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান তিনি। শেষ ওভারে যখন ২০ রানের প্রয়োজন। তখন ভাঙ্গা আঙ্গুল নিয়েই ভারতকে ম্যাচ জেতানোর চেষ্টা করে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ওভারের প্রথম চার বলে ১৪ রান তোলেন এই ব্যাটার। শেষ বলে ৬ মারতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ৫ রানে জয় পায় বাংলাদেশ।  


দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই কোহলিকে সাজঘরের পথ দেখান পেসার এবাদত। এবাদতের করা শর্ট পিচ বল কোহলির ব্যাটে লেগে স্ট্যাম্প উড়ে যায়। ৬ বল খেলে ব্যক্তিগত ৫ রানেই এদিন থামে কোহলির ইনিংস। পরের ওভারেই ভারতকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তৃতীয় ওভারে ফিজের করা বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হন ধাওয়ান। ১০ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ড্যাশিং ব্যাটার। 


এরপর নিজের প্রথম দলীয় দশম ওভারে এসেই ওয়াশিংটন সুন্দরকে ফেরান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবের করা বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ওয়াশিংটন। ১৯তম ওভারে আগের ম্যাচে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা কেএল রাহুলকে ফেরান মেহেদি মিরাজ। এদিন ব্যক্তিগত ১৪ রানেই ফেরেন তিনি। ফলে ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। 


এরআগে,  বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। প্রথম ইনিংসে লিটনের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে ব্যক্তিগত ১১ রানেই সাজঘরে ফেরেন বিজয়। মোহাম্মদ সিরাজের বলে এলবিডাব্লিউ'র ফাঁদে পড়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। বিজয়ের পর আউট হন লিটন দাসও। সেই সিরাজের বলেই বোল্ড হয়ে ২৩ বলে ৭ রান করে ফেরেন তিনি। 


এরপর ১৪ তম ওভারে উমরান মালিকের ১৫১ কিলোমিটার/ঘণ্টার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২১ রান করে ফেরেন তিনি। এরপর ব্যক্তিগত ৮ রানে আউট হন সাকিব। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এক ওভার পর ১৯তম ওভারে এসে পর পর দুই বলে দুই উইকেট নেন ওয়াশিংটন। ১৯তম ওভারের পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে মুশফিক ও আফিফ হোসেনকে ফেরান তিনি। 


মাত্র ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে দারুণ জুটি গড়ে বড় সংগ্রহ এনে দেন আগের ম্যাচে জয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ এবং অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম উইকেট জুটিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন তারা। মাহমুদুল্লাহ অর্ধশতকের দেখা পান। ম্যাচের ৪৭তম ওভারে উমরান মালিকের বলে কিপারের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন তিনি। এদিন ৯৬ বলে ৭৭ রানের এক দারুণ ইনিংস খেলেন রিয়াদ। 


এদিকে, রিয়াদের বিদায়ের পর নাসুমকে সঙ্গী করেই ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে থাকেন মিরাজ। শেষ ৩ ওভারে একের পর এক বাউন্ডারিতে ভারতের বোলারদের তুলোধুনো করেন এই ব্যাটার। চার-ছয়ের বন্যায় নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ম্যাজিশিয়ান। সাথে শেষ ৪ ওভারে স্কোরকার্ডে যোগ করেন ৫৪ রান। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ।  


বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস (অধিনায়ক), আনামুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আফিফ  হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ,  এবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।


ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়্যার, লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), ওয়াশিংটন সুন্দর, অক্ষর প্যাটেল, শার্দুল ঠাকুর, দীপক চাহার, মোহাম্মদ সিরাজ, উমরান মালিক।