অযত্নে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ, উদ্বিগ্ন গাছিরা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:১৮ পূর্বাহ্ন, ২৭শে ডিসেম্বর ২০২২


অযত্নে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ, উদ্বিগ্ন গাছিরা
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছি- ছবি: জনবাণী

সারাবছর অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর বাড়ে শীত মৌসুমে। এক সময় গ্রামের মেঠো পথে, বাড়ির আঙিনায়, জমির আইলে, চোখে পড়তো সারি-সারি খেজুর গাছ। প্রতিটি গ্রামে মহল্লায় দেখা যেতো খেজুর গাছের মাথার দিকে বিশেষ কায়দায় কাণ্ড ছেঁটে রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো সারি-সারি খেজুর গাছ এখন আর চোখে পড়ে না! রস সংগ্রহ করতে কাউকেও দেখা যায় না। খেজুর গাছ চোখে পড়লেও সেগুলোর কদর নাই বলেও চলে! যতই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে ততই মানুষ হারাচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্য।


সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের কিছু এলাকায় ইতিহাস ঐতিহ্যর খেজুর গাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হাছনবাহার সবুজ শ্যামল একটি গ্রাম। সে গ্রামের অনেকের বাড়িতে রয়েছে খেজুর গাছ। কেউ গাছের কদর করছেন, কেউ দেখছেন অবহেলার চোখে। যাদের খেজুরের রস সংগ্রহ করার কৌশল জানা আছে তারা রস সংগ্রহ করছেন।


সরেজমিনে দেখা যায়, রফিকুল ইসলাম নামের একজন খেজুরের গাছ থেকে খেজুরের রস নামাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিকেলে গাছ কেটে নল লাগাই। আর ভোর হলে গাছ থেকে রস নামাই। আগে আমাদের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি খেজুর গাছ ছিল। এখন অযত্নে অবহেলায় মরে গিয়ে মাত্র পাঁচটি গাছ আছে। শীত মৌসুম এলে এ গাছগুলির যত্ন নিয়ে সে পাঁচটি গাছে নল কেটে রস সংগ্রহ করি। প্রতিদিন একটি গাছ থেকে ৮ থেকে ৯ কেজি রস পাওয়া যায়। নিজে খাই আবার বিক্রি করি, প্রতি লিটার খেজুরে রস ৫০ টাকা। গত কয়েক বছর আগে এক কেজি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।


উপজেলার রসরাই গ্রামের গাছি জমির আলী বলেন, প্রায় ৩৮ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি। এখন আগের মতো খেজুর গাছ নেই। গাছও নেই তাই গাছ কাটাও বন্ধ করে দিয়েছি। তারপরও অল্প কয়েকটি গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি।


উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের এরুয়াখাই গ্রামের গাছি রশিদ মিয়া জানান, খেজুরের রস বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য। যত আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে, মানুষ ততই ঐতিহ্য ইতিহাস ভুলে যাচ্ছে। যতদিন যাচ্ছে তত খেজুর গাছ কমছে। তেমনি খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় রস ও গুড়ের ঐতিহ্য হারানোর কারণে আমাদের মতো হাজার গাছিও বেকার হয়ে যাচ্ছি।


দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ মুহসিন আলী বলেন, খেজুর গাছ এমন একটি গাছ, যার জন্য বাড়তি কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। শুনেছি উপজেলার হাছনবাহার গ্রামের একজন খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন, গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে যত ধরনের যন্ত্রের প্রয়োজন তা তাকে সংগ্রহ করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বাড়ির আশপাশ, জমির আইল, পুকুরপাড় এবং সড়কের ধারে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়। পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হলে কৃষকরা লাভবান হবে বলে জানান তিনি।