‘বাচ্চার কসম লাগে, আপনি কত টাকা খেয়েছেন বলেন’
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
জায়েদ বলে ফেলে, বাচ্চার কসম লাগে, আপনি কত টাকা খেয়েছেন বলেন। জায়েদ খান আমাকে বলছিল- আমি আপনার ছোট ভাই, আপনি বিষয়টি একটু দেখেন। সেদিন রাতে (নির্বাচনের দিন) সে অনেকভাবে আমাকে রাজি করাতে চেষ্টা করেছিল। এরপর আর আমার মাথা কাজ করেনি, আমি আস্তে আস্তে বের হয়ে চলে গেছি। এরপর আমি বাসায় গিয়ে মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হওয়া জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান জায়েদ খানের পদ বাতিল করে চিত্রনায়িকা নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করেন। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে আপিল বোর্ড। এ প্রসঙ্গে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘দুজন ভোটার লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জায়েদ খান ও সদস্য পদপ্রার্থী চুন্নু তাদেরকে ভোট দেওয়ার জন্য নগদ অর্থ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন ভোটার তাদের দুজনের অর্থ প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিছু ভিডিও ফুটেজে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই অর্থ প্রদানের অভিযোগটি সত্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে পারবেন। অভিযোগ পেয়েও বিষয়টি আমলে না নিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রধান পীরজাদা শহীদুল হারুণ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তার পক্ষপাতদুষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে প্রার্থীরা আপিল বোর্ডে অভিযোগ করেন। আমরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা চাইলে তারা আমাদেরকে চিঠি দেয়। চিঠি মোতাবেক আপিল বোর্ড বিষয়টির তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে অভিযুক্ত প্রার্থী জায়েদ খান ও চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করছে।’
এদিকে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানছেন না জায়েদ খান। তিনি আপিল বোর্ডের ঘোষণাকে আইন বহির্ভূত বলে দাবি করেছেন। নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার খবরে আপিল বোর্ডের সভায় অনুপস্থিত জায়েদ খান বলেন, 'নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণা হাস্যকার। এখানে আপীল বোর্ডের কোনো মূল্য নেই। তারা এরকম কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না৷ এটা আইন বহির্ভূত, পৃথিবীতে এমন নজিরবিহীন ঘটনা নেই। প্রজ্ঞাপনের পর আপিল বোর্ড কীভাবে এ রায় ঘোষণা করে? আমি আইনি ব্যবস্থা নেবো।'
এদিকে নিপুণ জানান, জায়েদ খান যদি মামলা করে আদালতে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত রয়েছেন।
এর আগে ভোট কেনার অভিযোগ এনে ফল বাতিলের জন্য আপিল বিভাগের কাছে আবেদন জানান নিপুণ। এ ছাড়া কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদটিও বাতিলের আবেদন করেছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হয়ে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগের কাছে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা আসে।
এরপর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান নির্বাচনী আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা সোহানুর রহমান সোহানসহ চার জনকে আইনি নোটিশ পাঠান।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ব্যারিস্টার মুজিবুল হক ভূইয়া স্বাক্ষরিত এ আইনি নোটিশটি আরও পাঠানো হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আপীল বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ হোসেনকেও।
জায়েদ খান জানান, নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি বিকাল ৫টার পর থেকে আপিল বোর্ড মৃত। এদিন তারা আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে এবং নিপুণ পরাজয় মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে চলে গেছে। সেই সময়ে আপিল বোর্ডের কাজ শেষ হয়ে গেছে।
আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বোর্ডের অপর সদস্য মোহাম্মদ হোসেন জেমী। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
এসএ/