কাল থেকে শুরু ইজতেমার প্রথম পর্ব


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, ১২ই জানুয়ারী ২০২৩


কাল থেকে শুরু ইজতেমার প্রথম পর্ব
ইজতেমার প্রস্তুতি

দুই বছর বিরতির পর আগামী শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ইজতেমার প্রথম পর্ব ও বৃহত্তর জামায়েত ৫৬ তম ইজতেমা আলমি শুরার তত্ত্বাবধানে (জুবায়েরপন্থি) অনুসারীরা আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারী আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা আগামী  ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারী তারিখে ইজতেমা পালন করবেন। এ পর্বে যে সকল মুসল্লিরা মাঠে অবস্থান করবেন  তারা সবাই মাওলানা জুবায়েরপন্থী।


অপরদিকে, গত মঙ্গলবার বিকেল ও রাতে ঢাকা ও তার পার্শবর্তি এলাকার মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করেছেন। তবে বুধবার সকাল থেকেই দেশের বাকি জেলার মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায়।


বৃহষ্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের চারপাশের ১৩টি প্রবেশপথ দিয়ে মুসল্লিরা  বাসে, ট্রাকে ও পায়ে হেঁটে মাঠে প্রবেশ করছেন। তাদের কারও হাতে ব্যাগ, কারও মাথায় প্রয়োজনিয় জিনিসপত্র। নিজ জেলা থেকে জামাত বন্দি হয়ে ময়দানে প্রবেশ করছেন মুসল্লিরা। মাঠে প্রবেশের পর তারা তাদের নির্ধারিত (খিত্তা) জায়গায় অবস্থান নিচ্ছেন।


শেরপুর জেলা নালীতাবাড়ি  থেকে জমাদার আলীর নেতৃত্বে (আমীর) ১৮ জন সাথী নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছে। অবস্থান নিয়েছেন নিজেদের খিত্তায়। কথা হয় দৈনিক  জনবাণীর প্রতিবেদকের সাথে। ইউসুফ আলী বলেন, দুই বছর পর ইজতেমা শুরু হয়েছে।তাই দুই দিন আগেই সাথীদের নিয়ে চলে এসেছি।ময়দানে পৌছতে পেরে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।


নিরাপত্তায় ব্যস্থায় যা থাকছে: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় ৩০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।পুরো ইজতেমা ময়দানকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যাস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।১৪টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মান করা হয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা থাকছেন।দুই পর্বে প্রায় সাত হাজার পুলিশ সদস্য ইজতেমায় মোতায়েন থাকছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার(দক্ষিণ) হাফিজুল ইসলাম।


পন্টুন নির্মাণ: প্রতিবারের ন্যায় এরারো সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুরাগ নদের উপর পাঁচটি পন্টুন তৈরি করা হয়েছে। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা রাজধানী উত্তরা-কামাড়পাড়া অংশ দিয়ে ময়দানে যাতায়াত করতে পারবেন।


চিকিৎসা সেবা: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি প্রায় ২৮টি সংগঠন তাদের অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করছেন বলে জানা যায়।


এছাড়া মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধানে ১৩টি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। মূমুর্ষ রোগী পরিবহনের জন্য ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন মো.খায়রুজ্জামান।


বিশেষ ট্রেন: ইজতেমা উপলক্ষে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।আগামী ১৩ জানুয়ারী থেকে চালু হওয়া এসব বিশেষ ট্রেন চলবে দ্বিতীয় পর্বে আখেরী মেনাজাত পর্যন্ত। আরেখি মোনাজাতের দুই দিন ময়মনসিংহ ও জামালপুর থেকে দুইটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া ইজতেমা চলাকালিন প্রায় সকল ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রকিবুল রহমান।


অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের অধিকাংশ গ্যাস সিলিন্ডার(এলপিজি) ব্যবহার করছেন।তাই এবারের ইজতেমায় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। প্রতিটি খিত্তায় দুইটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স,আগুন নিয়ন্ত্রনে চারটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।তাছাড়া ইজতেমা ময়দানে সার্বোক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ দুইটি টিম রয়েছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী ফায়ার সাভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর কফিল উদ্দিন।


গ্যাস ও বিদ্যুৎ: ইজতেমায় আগত বিদেশী মুসল্লিদের রান্নার জন্য টঙ্গী তিতাস গ্যাস কতৃপক্ষ অস্থায়ী গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। এবারেও ইজতেমা ময়দানে গ্যাস সংযোগ ও তা দেখভালের জন্য একটি টিম ময়দানে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী তিতাস গ্যাস আঞ্চলিক বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এরশাদ মাহমুদ। অপরদিকে, ইজতেমা ময়দানে নিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সর্বরাহ ও তরদারকি করে যাচ্ছে ডেসকোর টঙ্গী পশ্চিম বিভাগের কয়েকটি দল।


মৃত ব্যক্তিদের জন্য ব্যবস্থা: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে ময়দানের দক্ষিণ পাশে মৃত ব্যক্তির পরিচয় ও গোসলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগত মুসল্লিদের মৃত্যু,জানাজা জিম্মাদার(দায়িত্বে) হিসেবে রয়েছেন মাওলানা মো.শাকের।


ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়ের দ্বায়িত্বে থাকা জহির ইবনে মুসলিম দৈনিক জনবাণীকে বলেন, দুই বছর পর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইজতেমা শুরুর প্রায় তিনদিন আগে থেকেই মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করে নিজেদের খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। এবারের আসরে অধিক মুসল্লিদের সমাগম ঘটবে।বৃহষ্পতিবার দুপুরের পর ময়দান কানায় কানায় ভরে উঠবে বলে আশা করছি। 


আগামী ১৫ জানুয়ারী আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বে ইজতেমা শেষে মাঝে চার দিনের বিরতি দিয়ে ২০জানুয়ারী শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের সমাপ্তি ঘটবে।


জেবি/এসবি