ভিক্ষুকের কাছে রেখে যাওয়া সন্তানের পরিবারের সন্ধান মিলেছে


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:৪৯ অপরাহ্ন, ৩রা মার্চ ২০২৩


ভিক্ষুকের কাছে রেখে যাওয়া সন্তানের পরিবারের সন্ধান মিলেছে
শিশু সন্তানটির পরিবার

বৃদ্ধা ভিক্ষুকের কাছে রেখে যাওয়া সেই শিশু সন্তানটির পরিবারের সন্ধান মিলেছে। 


বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাতে শিশুটির মাসহ পরিবারের লোকজন লক্ষ্মীপুর সদর থানায় আসেন তাদের ছেলে শিশুকে ফিরিয়ে নিতে। তবে, আইনী প্রক্রিয়া শেষে আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে ফিরিয়ে নিতে হবে তাদের। আদালতের নির্দেশে শিশুটি এখন বেলাল হোসেন-নিশি আক্তার নামে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে রয়েছে। 


ভিক্ষুকের কাছে রেখে যাওয়া শিশু সন্তানটির নাম মাহিন (৩)। সে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের চরসীতা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মিরনের ছেলে। শিশুটির মায়ের নাম সুরমা বেগম। 


মিরন-সুরমা দম্পতির আরও তিন মেয়ে সন্তান রয়েছে। মাহিনের মা লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেহান উদ্দিন ভূঁইয়া সড়কে তার সন্তানদের নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। 


কেন সুরমা তার শিশু সন্তানকে বৃদ্ধা ভিক্ষুকের কাছে রেখে নিরুদ্দেশ হলেন পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে এর কারণ জানিয়ে সুরমা বলেন, আমার স্বামী সৌদিতে থাকেন। চার সন্তান নিয়ে আমি জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। প্রতি মাসে ১১ হাজার টাকা কিস্তি, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, সংসারের খরচ লাগে। সব মিলিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। মুদি দোকানে অনেক দেনা হয়ে আছি। তাদের বাবা কোনো খরচ দেয় না। তাই তার ওপর রাগ করে এ কাজটি করেছি। শিশু সন্তানকে ভিক্ষুকের কোলে দিয়ে অন্য সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি ভবানীগঞ্জের মিয়ারবেড়িতে চলে গিয়েছিলাম। ছেলেকে না নিয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন আমাকে বকাঝকা শুরু করেন। পরে বুঝতে পেরেছি, কাজটি  ঠিক করিনি। বুকের ধনকে রেখে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ঘটনার পরদিন সকাল থেকে তাকে খুঁজতেছি। কোথাও পাইনি। পরে বিকেলের দিকে পরিচিত একজন ফেসবুকের মাধ্যমে শিশুটির বিষয়ে জানতে পেরেছি। তার মাধ্যমে থানায় আসি।  


শিশুটির দাদা হাফিজ উল্যা বলেন, ১০ থেকে ১২ বছর আগে আমার ছেলের সঙ্গে সুরমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ছয় মাস তাদের বাড়িতে ছিলেন সুরমা। এরপর থেকে বাপের বাড়িতেই থাকতেন। আমার ছেলে মিরন প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। পুত্রবধূ নাতি-নাতনিদের নিয়ে জেলা শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। আমার ছেলে সংসারের খরচ পাঠায়। তারপরও আমার বাড়ির বউ মানসিক সমস্যার কারণে নাতিকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে যান। বিষয়টি আমরা ঘটনার রাতে সুরমার বাবার কাছ থেকে ফোনে জানতে পারি। এটা কোনো স্বাভাবিক মানুষের কাজ না। তবে নাতিকে ফিরে পেয়ে এখন আমরা সবাই খুশি।  


এদিকে বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে পুলিশ শিশুটিকে ভিক্ষুকের কোল থেকে উদ্ধারের পর স্থানীয় কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের তত্ত্বাবধানে দেন। কাউন্সিলর তার নিঃসন্তান আত্মীয়ের ঘরে লালন-পালনের জন্য রাখেন শিশুটিকে। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে পুলিশ শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করে। তার দায়দায়িত্ব সমাজসেবা কার্যালয়কে দেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। পরে ওই নিঃসন্তান দম্পতি আদালতের কাছে শিশুটিকে লালন-পালনের আবেদন জানালে শর্ত সাপেক্ষে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  


বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটির মায়ের খোঁজ পাওয়ার পর ওই দম্পতি শিশুটিকে নিয়ে থানায় যান। এসময় তাদের কান্না করতে দেখা গেছে। একদিনের মধ্যেই শিশুটিকে আপন করে নিয়েছিলেন তারা। শিশুটির প্রকৃত মা এসময় তার সন্তানকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার আকুতি জানান।  


লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটিকে পাওয়ার পর আমরা স্থানীয় কাউন্সিলরের জিম্মায় দেই। পরদিন আমরা শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করি। আদালত থেকে এক দম্পতিকে শিশুটি লালন-পালনের দায়িত্ব দিলেও শর্ত ছিল শিশুটির পরিবারকে পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এখন তার মা এবং পরিবারের খোঁজ মিলেছে। আমরা আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেব। আইনি প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে নিতে পারবেন তার মা। তবে সে সময় পর্যন্ত শিশুটি ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছেই থাকবে।  


প্রসঙ্গত, বুধবার (১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের আধুনিক হাসপাতালের সামনে এক নারী ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে তার কোলের শিশুকে সালমা বেগম (৭০) নামে এক প্রবীণ ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান। কিন্তু এরপর আড়াই-তিন ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ওই নারী আর ফিরে না আসায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়।