নারী নির্যাতনের মামলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আটক


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, ৩রা মে ২০২৩


নারী নির্যাতনের মামলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আটক
হোসেন আলী

যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) উপ-সহকারি প্রকৌশলী হোসেন আলীকে রাজশাহী নগরীর মোল্লাপাড়া থেকে তাকে আটক করা হয়।


সরকারি চাকরির তকমা দেখিয়ে বিবাহের নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে (বিউবো) উপ-সহকারি প্রকৌশলী হোসেন আলীর বিরুদ্ধে। তিনি বিউবো হবিগঞ্জ জেলার  শাহজিবাজার ৩৩০ মেঃওঃ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পরিচালন-১) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার পরিচয় নাম্বার ১১-২৬১১। হোসেন আলী রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার নীলবোনা গ্রামের আসাদুল হকের ছেলে।


সুত্র মতে,হোসেন আলী সরকারি চাকরির সাইনবোর্ড দেখিয়ে মোটা যৌতুক আর সম্পদের আশায় ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম বিয়ে করেছিলেন রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের জৈনক ব্যক্তির মেয়েকে। অবশ্য বিয়ের সময় হোসেন'কে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ও আসবাবপত্র বাবদ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা দেয় পাত্রীর পরিবার।  


মেয়েটির হাতের মেহেদীর রং শুকাতে না শুকাতে আরও টাকার জন্য চাপ দিয়ে বসে হোসেন ও তার পরিবার। এতে মেয়ের পরিবার টাকা দিতে অস্বিকার করলে চরম ক্ষিপ্ত হয় হোসেন আলী। সেখান থেকে মোটা যৌতুক আর সম্পদের সুবিধা না পাওয়ায় বউ এর উপর অমানষিক নির্যাতন করে হোসেন আলী। পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন মেয়েটি। 


পরে মামলা মোকাদ্দমার ভয়ে গত ২০২০ সালের জুন মাসের ৯ তারিখে আপসের মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সমাধান করেন হোসেন আলী। সেই সময় আপস নামাটি নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে লিখাপড়া করে কোর্ট এভিডেভিট করা হয়। সেই এভিডেভিট কপির মাধ্যমে জানা যায়, দ্বিতীয় পক্ষ অর্থাৎ ভুক্তভোগী মেয়েকে যৌতুক দেওয়া ৪,৫০,০০০(সাড়ে চার লক্ষ) টাকা ফেরত দেওয়া হয়। 


সেই কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে কেউ চাইলে পরবর্তীতে আর কোন দাবি দাওয়া করতে পারবে না। এই ঘটনার রেস কাটতে না কাটতেই আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে গত ২০২০ সালের নভেম্বরের ৯ তারিখে রাজাবাড়ি হাট বাজার সংলগ্ন জৈনক ব্যক্তির মেয়েকে বিয়ে করেন হোসেন। এই বিয়েতেও হোসেন আলীকে যৌতুক বাবদ ৬,৫০,০০০ (ছয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা পন দেওয়া হয়। 


এতে হোসেনের মনোপূত হয়না। পরবর্তীতে মেয়ের বাবার রাজশাহী শহরের বাড়ি দাবি করেন। এদিকে বিয়ের দেড় বছর গড়াতেই একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন হোসেন আলী। এরপর শহরের বাড়িটি পাওয়ার আশায় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর উপর অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। এমনকি তার বর্তমান কর্মস্থল হবিগঞ্জে নিয়ে গিয়েও মারধর করা হয়েছে স্ত্রীকে। 


সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহীতে মারধরের শিকার হয় মেয়েটি। এরপর মেয়েটিকে আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ছুটি নিয়ে মেয়েটি পরিবারিক আলোচনা সাপেক্ষে বাধ্য হয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানায় ২৫ এপ্রিল, "২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন" আইনের ১১ (গ) ধারায় মামলা করেন। মামলাটি রজু হলে সেই রাতে পুলিশ হোসেন আলীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু টাকার কাছে অসহায় হয়ে পড়ে মেয়েটি। 


একদিন পরে আপোস মিমাংশার শর্তে জামিন নেয় হোসেন আলী। জামিনে বের হয়ে মেয়ে ও মেয়ের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে বলে জানান মেয়ের পরিবার। এব্যাপারে হোসেন আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।


বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড হবিগঞ্জ জেলার পরিচালন বিভাগের ব্যবস্থাপক সুনীল কুমার দাস এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই ধরনের তথ্য আমার জানা নাই। আর স্বামী স্ত্রী'র ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে আমাদের অফিসিয়ালি কিছু করার নাই। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি আমলে নিয়ে অফিস দেখবে। হোসেনের আগে বিয়ে হয়েছিল এটা আমার জানা ছিলনা। 


একজন সরকারি কর্মকর্তা মামলার বোঝা কাঁধে নিয়ে হাজত বাস করলে দাপ্তরিক কোন ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, যদি ছুটি কাটানোর সময় এমন হয়ে থাকে তাহলে সমস্যা হবেনা। কিন্তু যদি বাংলাদেশের প্রচলিত যেকোন মামলার রায় নিয়ে জেলে যায়, তাহলে তার চাকরি থাকবেনা। তারপরও আপনি বললেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো বিষয়টি।


আরএক্স/