ছাগলকাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ বরখাস্ত
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:০২ পিএম, ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানকে ‘অনৈতিক সুবিধা’ দেওয়ার অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের ১১ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তদের মধ্যে আছেন এসআই ও ১০ জন কনস্টেবল।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।
কারা বরখাস্ত: বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন-এসআই আবুল কাশেম এবং কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, মো. কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, মো. রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভির রহমান, মো. আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস।
হোটেলে যাত্রাবিরতির ঘটনা: তদন্ত সূত্রে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট দুর্নীতির মামলায় শুনানির জন্য মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আনা হয়। শুনানি শেষে বিকেলে ফেরার পথে তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান ও স্কর্ট দলের গাড়ি নরসিংদীর নিরালা হাড্ডি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে পৌঁছে প্রায় ৫০ মিনিট যাত্রাবিরতি করে।
আরও পড়ুন: প্রবীণ রাজনীতিক
বদরুদ্দীন উমর
আর নেই
ফুটেজে দেখা যায়, হাতকড়া ছাড়াই মতিউরকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হয়। হোটেলের ভেতরে আগে থেকেই অপেক্ষমাণ ছিলেন সাদা টি-শার্ট, জিন্স ও কালো জুতা পরা একজন ব্যক্তি। সময় কোড অনুযায়ী বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে তিনি হোটেলের ভেতরের একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ সদস্যরা মতিউরকে একই কক্ষে প্রবেশ করান এবং নিজেরা বাইরে অবস্থান নেন।
ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ: প্রায় ৫০ মিনিট সেখানে অবস্থানের পর, সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে মতিউরকে কক্ষ থেকে বের হতে দেখা যায়। ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ওই ব্যক্তির কাঁধে হাত দিয়ে বের হচ্ছেন এবং বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে প্রিজন ভ্যানের দিকে যাচ্ছেন। আশপাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের আচরণ থেকেও বোঝা যায়, মতিউর পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। ঠিক ৬টা ৬ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে ওই ব্যক্তি তাকে আলিঙ্গন করে বিদায় জানান এবং ভ্যানে তুলে দেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৮ মিনিটে স্কর্ট গাড়ি ও প্রিজন ভ্যান ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
মতিউরের ভাই নিশ্চিতকরণ: কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার রিতেশ চাকমা জানান, কোনো আসামিকে আদালতে নেওয়ার পর ফেরানোর দায়িত্ব থাকে পুলিশের ওপর। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা সাদা টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তি আসলে মতিউর রহমানের ভাই বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।
তদন্তে প্রমাণিত অনিয়ম: এই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনে প্রমাণ মেলে, স্কর্ট দলের সদস্যরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অনিয়ম করেছেন। তাদের এ আচরণকে শৃঙ্খলাভঙ্গ, অসদাচরণ ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো গুরুতর অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এরপর পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল, ১৯৪৩-এর প্রবিধান ৮৮০ মোতাবেক ১১ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকালীন সময়ে তারা নিয়ম অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন। তবে তাদের পুলিশ লাইন্সে উপস্থিত থেকে রোলকল ও প্যারেডে অংশ নিতে হবে।
‘ছাগলকাণ্ড’ থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: গত বছরের কোরবানির ঈদের আগে মতিউর রহমানের ছেলে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনেছিলেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে দেশজুড়ে আলোচিত হয় এবং ‘ছাগলকাণ্ড’ নামে পরিচিতি পায়। গণ-অভ্যুত্থানের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী যিনি আওয়ামী লীগ নেত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হন।
জনমনে প্রতিক্রিয়া: এই ঘটনায় পুলিশের অনিয়ম এবং প্রভাবশালী আসামির জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি জনমনে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ করেছে, নিয়ম-শৃঙ্খলা ভেঙে মতিউর রহমানকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ফলে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি ন্যায়বিচারের প্রতি জনগণের আস্থাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
এসএ/