প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন আবেদন, শুনানি ১৬ আগস্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:২০ অপরাহ্ন, ৩রা মে ২০২৩
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আত্মনমর্পর করে জামিনের আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৬ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (৩ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন। এ পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে ২ এপ্রিল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো.আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন প্রদান করেন।
গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি ফটোকার্ডে একজন দিনমজুরের বক্তব্য "পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’ উদ্ধৃত করা হয়। কিন্তু সে উদ্ধৃতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় একটি শিশুর ছবি। দিনমজুরের উদ্ধৃতির সঙ্গে শিশুর ছবি প্রকাশের অসংগতির বিষয়টি তুলে ধরে ১৭ মিনিটের মধ্যেই ফটোকার্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে প্রত্যাহার করে সংশোধনী দেয় প্রথম আলো।
এঘটনায় গত ২৯ মার্চ রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক। এ মামলায় পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিবেদনটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, ওই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে- ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’
এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। সংবাদটি দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এ সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীকালে একাত্তর টিভিতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম-পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পত্রিকায় বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়। তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি। মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সবুজ। প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাত বছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝে মধ্যে ফুল বিক্রি করে।
এজাহারে আরও বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর ওই সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এ ছবি তুলেছে।