শ্রীনগরে ধান কাটার শ্রমীক সংকট, জমিতে ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, ৭ই মে ২০২৩


শ্রীনগরে ধান কাটার শ্রমীক সংকট, জমিতে ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক
ধান মাড়াই করছে কৃষক

শ্রীনগরে শ্রমিক সংকটে জমিতে পাকা ধান ঘরে তুলতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও কাঙ্খিত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আড়িয়ল বিলসহ উপজেলার বিভিন্ন চকের জমিতে কৃষকের পাকা ধান কাটার ধুম পড়েছে। এর ফলে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন তারা। 


বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শ্রীনগর বাজারসহ স্থানীয় হাটবাজারে শ্রমিকের সন্ধানে অসংখ্য কৃষককে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। এদের অনেকেই শ্রমিক না পেয়ে ফিরে গেছেন। তিন বেলা খাবার দিয়েও একজন শ্রমিকের মজুরী ধরা হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা করে। তারপরও মিলছে না শ্রমিক। স্থানীয় কৃষক বলছে, যদি কম্বাইন্ড হারবেস্টারে ধান কাটা যেত তাহলে এই দুর্ভোগে পড়তে হতো না। 


তাদের অভিযোগ এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন নেই। যাও আছে তারও সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। মদ্যসত্বভোগীরাই সব ফায়দা লুটে নেয়। দেখা গেছে, কালবৈশাখী ঝড় ছাড়াও বৃষ্টির আশঙ্কায় কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক। 


পাকা ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন আড়িয়ল বিল পাড়ের শতশত কৃষক পরিবার। এরই মধ্যে বির্স্তীণ বিলের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ জমির পাকা ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। 


জানা গেছে, গেলো দুই দফা কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাতের ফলে এ অঞ্চলের বিভিন্ন জমিতে ধান নুয়ে পড়েছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়া, শ্রমিক সংকট ও সামনে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে। বোঙ্গায় মাড়াইকৃত ভিজা ধানে মণ কেনাবেচা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯২০-৯৩০ টাকা দরে। শ্রমিকদের অর্থের যোগান দিতে উৎপাদন খরচ মূল্যেই এসব ধান বিক্রি করা হচ্ছে।


স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময় কৃষি প্রণোদনার আওতায় উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার মেশিনসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশে এক সঙ্গে ধান কাটা শুরু হওয়ায় অন্য জেলার কৃষি শ্রমিক এ অঞ্চলে কম আসছে। চলমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত আছে। উপজেলায় এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আড়িয়ল বিলের শ্রীনগর অংশেই ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম ধানের চাষ করা হয়েছে।

 

গাদিঘাটের শহিদুল ইসলাম জানান, আমার ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। বিলে এখনও অনেক ধান কাটার অপেক্ষায় আছে। হঠাৎ কৃষি শ্রমিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত মজুরী দিয়েও শ্রমিক পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ষোলঘরের আক্তার হোসেন বলেন, শ্রীনগর বাজারে শ্রমিকের সন্ধানে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসি। 


এলাকায় যে সমস্ত শ্রমিক আছে তারা সবাই অন্যের জমিতে ধান কাটছেন। শ্রমিকের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এ সুযোগে শ্রমিকরাও অতিরিক্ত মজুরী চাইছেন। পাটাভোগের আবুল হাসেম জানান, লোকমুখে শুনছি ঝুর্ণি ঝড় আসার সম্ভাবনা আছে। আমার জমির ধান এখনও আধাপাকা। ভাবছি চলতি মাসের শেষের দিকে কাটবো। 


এছাড়া জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানে চিটার পরিমাণ বেশী হচ্ছে। কুড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, আজ (শুক্রবার) গৃহস্ততের তিন বেলা খাবার খেয়ে ১০৫০ টাকা রোজে কাজ করছি। ১৫ জনের শ্রমিক দল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করছি। গত দুদিন আগেও সাড়ে ৮০০ টাকা রোজে কাজ করেছি। 


অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শ্রমিক কম আসছেন। কুকুটিয়া এলাকায় রফিক মিয়া নামে এক শ্রমিক বলেন, আমরা চুক্তিতে ধান কেটে কাটছি। জমির মালিকের খাবার খেয়ে প্রতি গন্ড (৭ শতাংশ) ক্ষেতের ধান কাটার জন্য পারশ্রমিক নিচ্ছি ১১০০ টাকা। সারাদিনে একজন শ্রমিক ১ গন্ডা জমির ধান কাটতে পারে। 


আরএক্স/