কক্সবাজার পর্যটন জোনের অপরাধীদের সম্রাট আশিক, ১৭ মামলার আসামি সে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কক্সবাজার পর্যটন জোনের অপরাধীদের সম্রাট আশিক, ১৭ মামলার আসামি সে

কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের মধ্যম বাহারছড়ার মৃত মাস্টার আবদুল করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম আশিক (২৯)। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যাচেষ্টা, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক, অস্ত্র ও দ্রুত বিচার আইনে ১৭টি মামলা রয়েছে। তার একাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। শহরের হোটেল মোটেল জোনের ব্যবসায়ীরা তাকে চেনে অপরাধীদের বাদশা হিসেবে।

এদিকে, তাকে প্রধান আসামি করে ও তার তিন সন্ত্রাসী গ্রুপের তিনজনের নাম উল্লেখ করে কক্সবাজার সদর থানায় বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণ মামলা করেছে এক গৃহবধূর স্বামী।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি মুনিরুল গিয়াস বলেন, আশিকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় বৃহস্পতিবার লিপিবদ্ধ হওয়া ধর্ষণ মামলাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। গত ৭ নভেম্বর তাকে আমরা একটি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যম কারাগারে পাঠাই। তবে সে ১৫ নভেম্বর জামিনে বের হয়ে আসে।

তিনি বলেন, স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় আশিক, তার বন্ধু ও সহযোগী ইসরাফিল হুদা জয় প্রকাশ জয়া, মেহেদী হাসান বাবু ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনসহ অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ভিকটিমের স্বামী।

কক্সবাজার শহরের কলাতলী রোডের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিপরীত পাশের কটেজ জোনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারাগার থেকে বেরিয়ে আশিক আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। রাত ১০টার পর বাইকযোগে দুইজন সঙ্গী নিয়ে কটেজে কটেজে হামলা করে নগদ টাকা মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে যায়। গত ২৪ নভেম্বর এক হোটেল মালিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৬০ হাজার টাকা ও তারপর দিন আরেক কটেজ মালিককে জিম্মি করে ১ লাখ টাকা লুট করে আশিক ও তার সঙ্গীরা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কটেজ জোনের এক ব্যবসায়ী বলেন, আশিক যেসব কটেজে ঢুকে গণ্ডগোল কিংবা লুটপাট চালায় সেসব হোটেলগুলো অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে হোটেল মালিকরা আইনের আশ্রয় নেন না।

থানা-আদালত ও আশিকের এলাকাবাসী সূত্র জানায়, কিশোর বয়সেই আশিকের অপরাধের জগতের পথচলা শুরু। ছোটবেলা থেকে আশিক মারামারি, চুরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মারামারি আইনে প্রথম মামলা লিপিবদ্ধ হয়। এর ১০ মাস পর ২০১২ সালের ২০ জুলাই একই থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টায় গুরুতর জখম আইনে মামলা হয়। তারপরে ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি একই থানায় একই ধারায় আরেকটি মামলা হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ডাকাতির চেষ্টার দায়ে একটি, অস্ত্র আইনে একটি এবং হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে অপর একটি মামলা হয়। তারপরের বছর ২০১৫ সালের ৫ মার্চ তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়। ওই বছরের ২১ নভেম্বর আশিকের বিরুদ্ধে সদর থানায় অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতি আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। তারপর দিন ২২ নভেম্বর ফের আরেকটি ডাকাতির মামলা লিপিবদ্ধ হয় তার বিরুদ্ধে।

এরপরে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অপরাধীদের বাদশা আশিকের বিরুদ্ধে ডাকাতি আইনে আবারও মামলা হয়। একই বছরের ১৪ অক্টোবর ফের অস্ত্র আইনে ও তারপর দিন মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন আশিকের বিরুদ্ধে আবারও হত্যা চেষ্টা মামলা ও ৭ নভেম্বর ডাকাতির প্রচেষ্টার এবং সর্বশেষ ২৩ ডিসেম্বর এক গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলা লিপিবদ্ধ হয়। আশিকের সন্ত্রাসী বাহিনী গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামের রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। ওই মামলার অন্য অভিযুক্তরা তার গ্রুপেরই সদস্য। তার এই গ্রুপে রয়েছে বাহারছড়া, কলাতলী, লাইট হাউজ ও সমিতি পাড়ার ৬০-৭০ জন উঠতি যুবক।

তাদের মধ্যে অন্যতম বাহারছড়া মোবারক, ফাহিম, বাবু, মেহেদী হাসান বাবুসহ আরও কয়েকজন। এদের সবার বিরুদ্ধে ইয়াবা, মারামারি, ছিনতাই হোটেল মোটেল জোন থেকে চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ধর্ষণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের আড়ালে আরও রাঘব বোয়াল রয়েছে। তারা ক্ষমতাধর হওয়ায় সব সময় আইনে বাইরে থাকে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নাছিমা আকতার বকুল বলেন, আশিক ও তার বন্ধুরা বাহারছড়াসহ আশপাশের এলাকার জন্য আতংক। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। এরা অনেকেই ইয়াবা ব্যবসার সাথে যুক্ত।