ঝুলে আছে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ, ব্যহত হচ্ছে পাঠদান


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:০৯ অপরাহ্ন, ১৮ই মে ২০২৩


ঝুলে আছে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ, ব্যহত হচ্ছে পাঠদান
ছবি: জনবাণী

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে অন্তত ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বারবার ধরণা দিয়েও কুলকিনারা করতে পারছেনা বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষকরা। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় জানিয়েও সুফল মিলেনি। 


এলজিইডির কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় চরম মূল্য দিচ্ছে বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শ্রেণি কক্ষ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এতো কিছুর পারেও রহস্য জনক কারণে অভিযুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। 


ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা সখিপুর থানাধিন ১৩৩ নং আবু সাইদ মাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩৮ নং সরদার বাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২৮ নং দুদু মিয়া বেপারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়. ১১৪ নং প্রগতি বিদ্যানিকেত, ৪৮ নং দক্ষিণ সখিপুর সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় ও ১ নং সখিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে এলজিইডি। 


১ বছরের মধ্যে বিদ্যালয় গুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করার শর্তে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ শেষ করে এখানো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভবন বুঝিয়ে দিতে পারেনি। নতুন ভবন নির্মানের জন্য বিদ্যালয় গুলোর পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে, শ্রেণি সংকট চরম আকার ধরণ করেছে। চরম ভাবে শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে বিদ্যালয় গুলোতে। 


এ বিষয়ে বারবার উপজেলা শিক্ষা অফিস, এলজিইডি এমনকি উপজেলায় বিভিন্ন সভায় উপস্থাপন করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোন বিদ্যালয়ে একতলার ছাদ ঢালাই শেষে দ্বিতীয় তলার ছাদের কিছু কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ছাদ ও রুম করে ফ্লোরে ঢালাই না করেই লাপাত্তা ঠিকাদার। কিছু দিন পরপর ৩/৪ জন শ্রমিক এসে এক দুই দিন কাজ করে আবার লাপাত্তা হয়ে যায়। এভাবেই চলছে বছরে পর বছর। রুম সংকটের কারণে নির্মাণাধীন ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে বিদ্যালয়গুলোতে। 


এলজিইডি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ স্বেচ্ছাচারী অচরণ করছে বলে অভিযোগ বিদ্যালয়ের শিক্ষাকদের। 


৮৪ নং দক্ষিণ সখিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সালমা জাহান বলেন, ভবন সংকটের কারণে আমরা ১ শিফটে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে পারছি। ২০২০ সালে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কিছুদিন কাজ করার পরে কাজ বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারের লোকজন। পরে আমরা অফিসে জানানোর পরে আবার কাজ শুরু করে। এক দেড় মাস পরে আবারো কাজ বন্ধ করে চলে যায়। এখন ছয় মাস যাবত কোন কাজ হচ্ছে না। আমার বিপদের মধ্যে আছি। 


১২৮ নং দুদু মিয়া কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক আলম বলেন, আমার বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি র্দীঘদিন যাবত পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এক বছরের মাধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অদ্য পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করছেনা। আমরা বাধ্য হয়ে নির্মাণাধীন ভবনেই শিশুদের পাঠদান করছি। কারণ এছাড়া আর কোন উপায় নেই। ঠিকাদারকে অনেক অনুরোধ করেছি। কোন লাভ হয়নি। বহুবার শিক্ষা অফিসে এলজিইডি অফিসে জানানো হয়েছে। কোন লাভ হয়নি। এখন আমরা কি করবো তাও বুঝতে পারছি না। 


স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী অনুপম চক্রবর্তি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি মৌখিক ভাবে বারবার বলার পরেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি’র কর্মকর্তারা। বিষয়টি রহস্য জনক মনে হয়েছে। তাই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেয়া হবে। এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত ভবন গুলো নির্মাণ কাজ শেষ করার ব্যবস্থা করবো।


জেবি/ আরএইচ