বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইপনার ৫ম বর্ষ উদযাপন
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৪৫ পিএম, ১৭ই জুন ২০২৩

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম (ইপনা) প্রতিষ্ঠার ৫ম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে শনিবার (১৭ জুন) অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, শিশুরা হলো ফুলের মত। ফুল বিভিন্ন সময়ে বিকশিত হয়, প্রস্ফূটিত হয়। শিশুরাও নানান সময়ে ফুলের মত বিকশিত হয়। শিশুর মেধার বিকাশের জন্য তাদের অনুপ্রেরণা দিতে হবে। তাদের যে কোন কাজে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। অটিজম শিশুদের পর্যবেক্ষণ করে দেখতে তারা কোন বিষয়ে তাদের আগ্রহ আছে। তাদের সে বিষয়ের দিকে ধাবিত করতে পারলে মেধার বিকাশ নিশ্চিত হবে। অটিস্টিক শিশুরা একেক জন একেক বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, অটিজম সম্পর্কে এখনো দেশের মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের ব্যবহারের কারণে পাগল বলা হয়। এমনকি ভুল চিকিৎসা করে অনেক শিশুকে অকালে মেরে ফেলা হয়। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে খুব দক্ষ হয়ে থাকে। তাই এদেরকে প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত না করে বিশেষ শিশু বলা উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে অনেক শিশুর পক্ষে স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউতে মরণোত্তর দেহদানকারী ও অঙ্গীকারকারীদের সংবর্ধনা
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইপনা একটি ইতিহাস। ইপনার মতো সম্প্রতি আরও দুটি ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রথমবারের মতো সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ও ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টও ইতিহাসের অংশ। তিনি বলেন, ইপনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পরিম-লে সুপরিচিত দানে সহায়ক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক জায়গা থেকে অস্টিটিক শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তাঁর সুযোগ্যকন্যা সায়মা ওয়াজেদ অটিজম শিশুদের জন্য সারা বিশ্বে মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের মেধার মূলায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম শিশুদের সুরক্ষা, প্রশিক্ষণ ও মেধা বিকাশের কাজ করার কারণে সারাবিশ্বে তাকে স্বাগত জানায়। তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ইপনা ইতিবাচক কাজ করছে। এই কাজকে আরও বেগবান করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ এর অনুমতি নিয়ে তাকে ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা সারা দেশে মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি কোর্স রাখতে হবে অটিস্টক শিশুদের নিয়ে।
আরও পড়ুন: রোগীর মুখের হাসির চাইতে আনন্দের আর কিছু নাই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. জাফর ইকবাল বলেন, ছোট্ট শিশুরা সামাজিক রেসপন্স থেকে ইদানিং পিছিয়ে পড়ছে। এর কারণ স্ক্রিন বা মোবাইলের দিকে শিশুর রিসপন্স। অনেক মা বাবা শিশুর হাতে মোবাইল দিয়ে খাবার খায়ানোসহ নানান কাজ করেন। এটি করলে শিশুরা ক্রিন মুখী হয়ে যাবে। শিশুদের বর্তমান এবনর্মালিটির জন্য অনেকাংশে মোবাইল দায়ী। এতে করে শিশুর মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুর মোবাইল ব্যবহারে অটিস্টিকের বৈশিষ্ট্যকে ত্বরান্বিত করে। তিনি বলেন, ইপনা’র থিম সং এ শিশুদেরকে ফুলের সাথে তুলনা করা হয়েছে, তারা ফুলের মতই পবিত্র। আর এসব বিশেষ শিশুদের বিশেষ যতœ নিলে তারাও সমাজে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে অধ্যাপক ডা. শাহীন আখতার বলেন, ‘যতেœ সেবায় ভালবাসায় বদলে দেই’ (ডব ঈধৎব ডব ঈযধহমব) স্লোগান নিয়ে একটি সমন্বিত সেবাদান পদ্ধতিতে ইপনা অটিজমসহ অন্যান্য স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে সিন্যাক প্রতিষ্ঠা এবং পরবর্তিতে ইপনায় রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যারা অবদান রেখেছেন তিনি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড নিউরোলজি এ্যাসোসিয়েশন (ইকনা) এর প্রেসিডেন্ট শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রতিভা সিঙ্ঘি, এবং এ্যাসোসিয়েশন অব চাইল্ড নিউরোলজি (এওসিএন) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক শেফালি গুলাতি প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইপনা’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শিশু অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ডা. শাহীন আখতার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইপনার ট্রেইনিং কোঅর্ডিনেটর ডাঃ মাজহারুল মান্নান। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, ইপনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জেবি/এসবি
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

হাজারো শিক্ষক প্রেস ক্লাবের সামনে, তোপখানা রোডে যান চলাচল বন্ধ

হালাল শিল্প পার্ক স্থাপনে মালয়েশিয়ার সহায়তা চায় বাংলাদেশ

ড. ইউনূসকে লাল গালিচায় স্বাগত, ইউকেএম দিল সম্মানসূচক ডক্টরেট

ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ
