মুঠোফোনে উপাচার্যের সঙ্গে অসদাচরণ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:০৮ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৩
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরকে ফোন করে অছাত্রসুলভ, অশ্রাব্য, অভব্য এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় কথা বলার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও কেনো স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৭-২০১৮ সেশনের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের মেহেদী হাসান৷
বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রবিবার (৩০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ.দা.) প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়। এছাড়াও এই ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের শনাক্ত করতে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনকালে উপাচার্যের বিনা অনুমতিতে ফোনালাপ রেকর্ড এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া দেশের প্রচলিত আইন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নিয়ম-কানুন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এছাড়াও শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ঐ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় হতে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা লিখিতভাবে জানানোর জন্যও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রাপাত হয় ঈদের ছুটিতে হল খোলার রাখার দাবিকে কেন্দ্র করে। গত ১৮ জুন ঈদের ছুটিতে হল খোলা রাখার দাবিতে প্রভোস্টের কাছে সমাধান পায়নি শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এ সময় প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যকে না পেয়ে মুঠোফোনে কল দিয়ে শিক্ষার্থীরা হলের ছুটি কমাতে অনুরোধ জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের সাথে তর্কাতর্কি শুরু করলে উপাচার্যও পাল্টা জবাব দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের কথোপকথনের কল রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফোনকলটি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর ফোন থেকে যাওয়ার কারণেই শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী বলেন, বিনা অনুমতিতে কোন ব্যক্তির সাথে ফোনালাপ রেকর্ড করা ও সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া, অশ্রাব্য ও মানহানিকর কথা বলা অপরাধের সামিল। শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ৭ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি থাকতেই পারে। তবে সেগুলো অবশ্যই নিয়মের মধ্যে থেকে সমাধান করতে হবে। নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজের সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তার ব্যাখ্যা পেলে তদন্ত কমিটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কি করবে না করবে সে ব্যাপারে কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে।
আরএক্স/