ইবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চায় শিক্ষক ও সহপাঠীরা
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৫৬ অপরাহ্ন, ১২ই আগস্ট ২০২৩
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের(ইবি) ‘ল এন্ড ল্যান্ড’ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধা'র রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক ও সহপাঠীরা।
শনিবার(১২আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ল এন্ড ল্যান্ড বিভাগের আয়োজনে মীর মশাররফ হোসেন অনুষদ ভবন থেকে প্রতিবাদী র্যালি শুরু হয়। এসময় র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যেঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাদদেশে এসে সমবেত হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে নওরীনের শেষ বিদায়ে শুশুরবাড়ির অনুপস্থিত কেন? তদন্তকাজে বিশ্ববিদ্যালয়কে পাশে চাই, সুস্থ তদন্ত ও বিচার চাই সহ নানা দাবির প্লেকার্ড দেখা যায়।
এসময় মানববন্ধনে শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, বিভাগের সভাপতি সাহিদা আখতার আশা, সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসানসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠন নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে নওরীনের সহপাঠীরা জানায়, নওরীন দাবি আদায়ে সোচ্চার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সদা তৎপর ছিলেন। আত্মহত্যা নিয়ে লেখালেখি করতেন, সেরা লেখক সম্মাননা পেয়েছেন। বিবাহের পর নওরীনকে তার লেখাপড়া বন্ধের জন্য স্বামীর পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হয়। তাকে সারাদিন রুমের মধ্যে আটকে রাখা হতো।নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হতো। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানায়।
এসময় 'ল এন্ড ল্যান্ড' বিভাগের সভাপতি সাহিদা আখতার আশা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো সংগঠন বা এমন কোনো মঞ্চ নাই যেখানে নওরীনের পদচারণা হয়নি। মৃত্যুর দুইদিন আগে আমাকে কল দিয়েছিলো আমাকে বললো ম্যাম আজকেতো ভর্তির লাস্ট ডেট। আমিতো আসতে পারিনি। আপনি কি আমার অনুপস্থিতিতে অন্যকাউকে দিয়ে ভর্তি করার অনুমতি দিবেন ম্যাম? স্বাভাবিকভাবে আমার চিন্তা হলো নওরীন আসলো না কেন। প্রশ্ন করলাম তুমি আসো নি কেনো। তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার স্বাক্ষর করবে কে। আমিতো অনুমতি দিতে পারি না। এটা হয় না। তোমাকে তো আসতে হবে। নওরীন বললো ম্যাম আমি আপনাকে পরে ফোন করবো। তারপর তাকে জানায় যে তোমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে মেইল করে পাঠাও। তখনও আমার মনে হচ্ছিলো যে খারাপ কিছু হচ্ছে। দূর্ঘটনার পর ওর মা আমাকে ফোন করে জানায়। যে মানুষটা সকল অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো সে কিভাবে নিজেকে এমন করতে পারে? নিশ্চয় কোনো কারণ ছিলো।
এছাড়াও তিনি বলেন, বিবাহের আগে সুস্থতার জন্য নওরীন যেসকল ঔষধ সেবন করতো বিবাহের পর সে সকল ঔষধ সেবন করা বন্ধ করে দেয়া হয়। কারও সাথে কোনো যোগাযোগ করতে না পারে তাই শুধু একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হতো। তাকে নিয়মিত টর্চার করা হয়েছে। মৃত্যুর ছয় ঘন্টা আগে তার শুশুরবাড়ি থেকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে। এসকল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস রয়েছে যেগুলো তার ফোন চেক করলেই পাওয়া যাবে। এ থেকে বুজতে পারা যায় যে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে বা তার পেছনে কারও হাত রয়েছে। আমি আমার মেয়েতুল্য, আমার ছাত্রীর জন্য, বাংলাদেশের একজন সুনাগরিকের জন্য বিচার দাবি করছি। যারা আমার মেয়েকে অন্ধকার কবরে পাঠিয়েছে তাদের সুষ্ঠু বিচার করা হোক। আজকে যদি নওরীনের হত্যার বা আত্মহত্যার প্ররোচণার বিচার না হয় তাহলে আর কোনো নওরীন নুসরাত গড়ে উঠবে না।
শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোড়নসৃষ্টিকারী মেধাবী মুখ উন্মোচিত হয় নিজ যোগ্যতায়, ইবির তেমন একটি মুখ নওরীন। প্রগতিশীল এই মেয়েটি মাত্র ১৬-১৭ দিন আগে বিয়ে করেছে। এমন কি ঘটনা ঘটলো যে মেয়েটি বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাকে ঘরে তালাবদ্ধ রাখতে হলো। অনেক আত্মহত্যা দেখেছি। কোন আত্মহত্যার নেচার এ আত্মহত্যার সাথে মেলাতে পারছিনা। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন পোস্টমর্টেম করেছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার দ্বার উন্মোচিত করেছে। এই ঘটনার রহস্য দেশ ও জাতির কাছে উন্মোচন হওয়া দরকার।
প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পলাশবাড়ী নামাবাজারের একটি ভাড়া বাসার ছয়তলা থেকে পড়ে নওরীনের মৃত্যু হয়। ঐ বাসায় নওরীন তার স্বামী ইব্রাহীম খলিলের সঙ্গে সেখানে থাকতেন।
আরএক্স/