আজীবন বহিষ্কারের শাস্তিতেও ইবিতে থামছে না র‍্যাগিং


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:৩০ অপরাহ্ন, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৩


আজীবন বহিষ্কারের শাস্তিতেও ইবিতে থামছে না র‍্যাগিং
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং বিষয়ে 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণা দিয়ে র‍্যাগিং বিরোধী সচেতনতামূলক মাইকিং প্রচারণা চালায় প্রশাসন। এছাড়াও র‍্যাগিং একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ জানিয়ে প্রক্টর অফিস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু র‍্যাগিং বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এতো চেষ্টার পরও র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ যেনো থামছে না।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই ইবিতে সিনিয়র-জুনিয়র বন্ডিং এবং নবীন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের আদব-কায়দা শেখানোর প্রথা ছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি পরিচয় পর্ব বা ম্যানার শেখানোর গন্ডি পেরিয়ে র‍্যাগিংয়ে পরিণত হয়।


তবে ইবিতে র‍্যাগ দেওয়ার অভিযোগ সর্বপ্রথম জনসম্মুখে আসে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সমাজকল্যাণ বিভাগের তিন ছাত্রীকে র‍্যাগ দেওয়ার ঘটনায়। এসময় একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


আর সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ দ্বারা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে র‍্যাগিংয়ের নামে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাটি পুরো দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পরে আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতিসহ পাঁচ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

 

এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী তাহমিন ওসমানকে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন শুভ, মিজানুর ইমন, আকিব, পুলক ও সাকিব। এঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা ওসমান গনি শওকত রেজিস্ট্রার বরাবর মেইলে অভিযোগ জানায় এবং পরে ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর ছয় পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। ঘটনা তদন্ত করার জন্য ইতিমধ্যে ৫ সদস্যের কমিটি কাজ করছে বলে জানা যায়।


তবে শীগ্রই র‍্যাগিং বন্ধ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। তিনি বলেন, র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১ম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগের দিনেই সাংবাদিক ফোরামসমূহে চিঠি দেয়া হয়েছিল এবং প্রায় ২০ টা পত্রিকায় র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে উল্লেখ করে নিউজ হয়েছিল। এছাড়া, সচেতনতামুলক মাইকিং হয়েছে পরপর কয়েক দিন। 


এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। বিভাগের সভাপতি, ডিন, প্রভোস্টদের কাছে প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। বিলবোর্ডে র‍্যাগিংবিরোধী প্রচার রয়েছে। একাধিকবার র‍্যালি করা হয়েছে। প্রশাসনের নেতৃত্বে ডিন, প্রভোস্ট, সভাপতিদের নিয়ে র‍্যাগিং বন্ধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তারমধ্যেই এইসব চলছে।


এছাড়াও তিনি বলেন, সম্প্রতি যে অভিযোগ এসেছে সেখানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার আবেদনে উল্লেখ করেছে, যখন জিমনেশিয়ামের পাশে তাকে রাগিং দেয়া হচ্ছে তখন সে র‍্যাগিং বিরোধী প্রচারের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। আমার মনে হয়, চেষ্টার কোনও ত্রুটি করা হয় নাই। তবুও, এসব ঠেকানো দূরহ হয়ে উঠছে, কারণ কোভিড পরবর্তী ব্যাচগুলো কেমন যেন, কারও কথাই শুনছে না এরা। তবে আমি আশাবাদি, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় একদিন র‍্যাগিং বন্ধ হবে।


আরএক্স/