ঝালকাঠিতে পুকুরের মধ্যে বাঁশখুটি দিয়া মাঁচান বানিয়ে বসবাস


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২৩


ঝালকাঠিতে পুকুরের মধ্যে বাঁশখুটি দিয়া মাঁচান বানিয়ে বসবাস
ছবি: জনবাণী

ষাট উর্ধ্ব মিনারা বেগম স্বামী সিরাজুল ইসলামের সাথে থাকতেন শরিয়াতপুর জেলায়। কিন্তু বছর ১৫ আগে স্বামীর মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে চলে আসেন। কিন্তু বাবার বাড়িতে জমি-জমা কিংবা বাড়ি ঘর না থাকায় অন্যের দয়ায় এখানে ওখানে থাকতেন দীর্ঘ বছর। একমাত্র মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। তবে তার সংসারেও অভাব অনাটন। আশ্রয়নের ঘর কিংবা সরকারি সুযোগ সুবিধার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও মেলেনি কোন সুযোগ। অবশেষে নলছিটি পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকায় মায়ের ভাগের সম্পত্তির একটি পুকুরের ওপর এখন ঠাঁই হয়েছে অসহায় মিনারা বেগমের। আর তার সাথে রয়েছে মেয়ের ঘরের নাতি বিল্লাল হোসেন। পুকুরের ওপর পুরাতন বাশ-খুটির মাঁচান তৈরি করে গত তিন মাস ধরে বসবাস শুরু করেছেন তারা ।


মিনারা বেগম বলেন,আমার স্বামী মইরা গেছে ১৫ বছর হইছে। আমার একটা নাতি আছে ও আমার সাথে থাকে। এই নাতিরে লইয়া অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। আয় রোজগারের কেউ না থাহায় ঘর তুলতে পারছিনা। সবার কাছে চাইয়া বাঁশ খুটি আইনা এই পুকুরে মধ্যে মাঁচান বানাইয়া থাহি। 

এই জায়গাটা দিবে না তিনবছর ধরে মামাতো ভাইগো কাছে ঘুরতে আছি। আমার মায়ের জায়গা পাইবো মামাবাড়ি। কিন্তু এরপরও আমারে ঘর বানাইতে দেয়নায় বাড়িতে। 


এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অসহায় বিধবা নারী মিনারা বেগম। মিনারা বেগমের বিবাহ হয়েছিল ফরিদপুরে তার স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে সেখানে যা জমি ছিল তা বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা করিয়েছেন। তার বাবার বাড়ি নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের রাজ পাশা গ্রামে। সেখানে তাদের কোন জমি নাই। তাই তার মামা বাড়িতে তার মায়ের জমিতে ঘর উত্তোলন করে বসবাস করতে চেয়েছিলেন। 


তাই নলছিটি পৌরসভার সবুজবাগ এলাকায় মায়ের জমিতে পুকুরের মধ্যে বাঁশ খুটি দিয়ে মাঁচান তৈরি করে পলিথিন দিয়ে দীর্ঘ তিনমাস ধরে বসবাস করছেন মিনারা বেগম ও তার নাতি বিল্লাল হোসেন। 


অসহায় মিনারা বেগমের কোন ছেলে সন্তান নাই। একটা মেয়ে আছে তারও জামাই তাকে ছেড়ে দিছে। মেয়ে চিটাগং থাকে। মিনারা বেগম তিনবছর হয়েছে নলছিটিতে এসেছি মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে গিয়েও  কোন কিছুই পায়নি। সরকারি ঘরের জন্য দুইবার আবেদন করেছে কিন্তু তাও কপালে জোটেনি। তাছাড়া বিধবা ভাতার জন্য গিয়েও তা বলছে কোটা খালি নাই।

তার নাতি নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অনেক কান্নাকাটি করে ঘর নাই এভাবে থাকা যানা। পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়। ও যে চট্টগ্রামে গিয়ে লেখাপড়া করবে তার মায়ের কাছে সেখানে অনেক খরচ বেশি। কেউ সাহায্য সহযোগিতা বা থাকার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে নাতিটাকে নিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে পারে।


নলছিটি পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিধবা ওই মহিলা তার নাতিকে নিয়ে ৩ মাস ধরে এখানে বাঁশ খুটি মাচা বানিয়ে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিয়ে পুকুরের উপর থাকছেন।আসলে এটা মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে বসবাস করছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার কাছে আসলে আমি ফেইসবুক লাইভ দিলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। ঢাকার জসিম নামে এক সাংবাদিক তাদের দুইবান টিম কিনে দিয়েছে। আসলে তার দরকার থাকার মতো একটা ঘর।


এবিষয়ে মিনারা বেগমের মামাতো ভাইদের বাড়িতে না পাওয়ায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 


নলছিটি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, মিনারা বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে ওনি যদি ভাতা পাওয়ার প্রাপ্য হয় তাহলে অবশ্যই ভাতার আওতায় আনা হবে।


নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মিনারা বেগমের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি ওখানে যাবো গিয়ে তার অবস্থা দেখবো। আর তার জন্য সরকারি সহয়তা করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।


জেবি/এসবি