মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য গরুকে আলিঙ্গন করুন


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯:০৮ অপরাহ্ন, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৩


মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য গরুকে আলিঙ্গন করুন
ছবি: ফাইল ছবি

ব্যবসার লোকসান থেকে বাঁচতে একটি নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে ডাম্বল ফার্ম নামে যুক্তরাজ্যের একটি গরুর খামার, যা 

ইতিমধ্যে দেশটিতে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ফার্মের কতৃপক্ষরা কাডলিং সেশন নামে গরুকে জড়িয়ে ধরার একটি নিয়ম চালু করেছে, যা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে থেরাপির মতো কাজ করছে। পশু প্রেমীদের কথা মাথায় রেখে নতুন এ উদ্যোগটি গ্রহণ করে তারা। এতে সফলতার মুখও দেখেছে তারা। প্রতিজনের জন্য সেশন ফি টিকিট প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকার মতো, যা কয়েক মাস আগেই অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায় এমনটাই অভিমত তাদের। রবিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছেন। 


‘মোরাগ’ হল স্কটিশ হাইল্যান্ড জাতের একটি আকর্ষণীয় গরু। উত্তর ইংল্যান্ডের ডাম্বল ফার্মের প্রধান ঘর থেকে মাত্র বেরিয়ে এসেছে গরুটি। অতিথীদের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত সে। আগত দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা পূর্ব ইয়র্কশায়ারের বেভারলির কাছে অবস্থিত এই খামারে দুধ, দই বা পনির কিনতে নয়, তারা এসেছেন মোরাগ এবং তার সঙ্গীদের সাথে আড্ডা দিতে।


আধুনিক এই ডেইরি ফার্ম পরিচালনায় অর্থ সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় ফিওনা উইলসন এবং ডাম্বল ফার্মে তার অন্যান্য সহকর্মীরা ফেব্রুয়ারিতে কাডলিং বা আলিঙ্গন সেশন শুরু করেছিলেন। এএফপিকে উইলসন জানান, ‘কিছু মানুষ আছে যাহারা কুকুর, বিড়াল বা ঘোড়ার সঙ্গে সময় কাটানো দারুণ উপভোগ করেন। আর অন্যরা ভালোবাসেন গরুর সাথে সময় কাটাতে। মানুষ একটি ভালো উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। মানুষের মানসিক চিন্তা কমাতে প্রাণীদের সাহচর্যে আসা প্রায় একটি থেরাপির মতোই কাজ করে থাকে।’



‘এভাবে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব’


এ ফার্মের মালিকরা তাদের খামার ব্যবসায় নতুনত্ব আনতে চেয়েছিলেন। কারণ, দুধের দামে তীব্র পতন এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি তাদের দুগ্ধ খামার ব্যবসাকে প্রায় পঙ্গু করেই দিচ্ছিল। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক সংকটের ফলে কৃষকদের এই খামার শিল্প ছেড়ে বিকল্প আয়ের উৎস বেছে নিতে এক প্রকার বাধ্য করেছে।


হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির একটি গবেষণার সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়েছে যে, ১৯৫০ সালে যুক্তরাজ্যে এক লাখ ৯৬ হাজার দুগ্ধ খামার ছিল। তবে ১৯৯৫ সালে এ খামারের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩৫ হাজার ৭০০টিতে।


২০(বিশ) মাস আগে ইউক্রেনে যুদ্ধ সংঘঠিত হওয়ার পর থেকে একদিকে যেমন দুধের দাম কমে যায় তেমনি অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান ভাবে বিদুৎ ও জ্বালানি, পশু খাদ্য এবং সারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের কাছে তাদের কফিনের শেষ পেরেকের মতো ঠেকেছে।


কৃষকদের প্রতিনিধিত্বকারী ‘কৃষি ও উদ্যান উন্নয়ন বোর্ডে’র প্রধান দুধ ক্রেতাদের নিয়ে করা সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের দিকে ব্রিটেনে আনুমানিক ৭ হাজার ৫০০টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামার ছিল। সমসাময়িক বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেই ডাম্বল ফার্ম গত সাত বছরের মধ্যে ছয় বছরই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। সেসময় প্রতি বছরই খামারটি বেশ কয়েক মাস ধরে পানির নিচে ছিল।


উইলসন জানান, সে এবং তার খামারের অংশীদাররা, যাদের মধ্যে তার স্বামী এবং ভাইও রয়েছেন; তারা বছরের প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করছিলেন এবং একইসাথে ক্ষতির মুখে পড়ছিলেন। তিনি আরো জানান, ‘এভাবে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। এখানে কোনও ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের অবস্থার কোনও প্রকার উন্নতিই হচ্ছিল না।’


২০২২ সালের জানুয়ারিতে এ কৃষকেরা তাদের দুগ্ধ খামারে বৈচিত্র্য আনার সিদ্ধান্ত নেন এবং পাঁচটি গরু ছাড়া বাকি সব দুগ্ধজাত পশুগুলো বিক্রি করে দেন। ওই পাঁচটি গরুর সাথে তাদের বেশ ভাব ছিল। উইলসন বলেছিলেন, ‘এরা খুব শান্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রকৃতির। হ্যা এরা সত্যিই আমাদের বন্ধু ছিল।’


তিনি আরও জানান যে, ‘আমরা ভাবলাম, আমাদের সংরক্ষণ প্রকল্পের বাইরে গরুগুলো ব্যবহার করে কাডলিং বা আলিঙ্গন সেশনের মাধ্যমে কিছুটা বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারি। এবং এই আইডিয়া শেয়ার করে অন্যান্য মানুষদেরকেও আমরা তাতে জড়িত করছিলাম। আর সেবাগ্রহীতাদের আমন্ত্রণ জানাতে এবং তাদের আলিঙ্গন করতে গরুগুলো বেশ কয়েক মাস ধরে প্রস্তুত করা হয়। উইলসন বলেছিলেন, ‘এরা অনেক উৎসুক প্রাণী। মানুষ এদের নিকটে আসলে বেশ আগ্রহ দেখায় এরা।’


তাদের এই উদ্যোগ দেশব্যাপী ভালোই সাড়া ফেলে। নতুন এ অভিজ্ঞতা নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু প্রেমিরা পরিবারসহ এখানে বেড়াতেও আসে। আর জনপ্রতি প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা মূল্যের টিকিট কয়েক মাস আগেই অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়।


‘এই অভিজ্ঞতা—দারুণ একটা থেরাপি বটে’


শস্যাগারের ভেতরে ঘুমন্ত গরুগুলো জাবর কাটে। এদের চিবুকের নরম পশমে হাত বুলিয়ে আনন্দ পায় আগত অতিথীরা।স্টিভেন ক্লুস জানান, তার স্ত্রীর জন্য তিনি এই সেশনের একটি টিকিট ক্রয় করেছিলেন। যিনি হাইল্যান্ড জাতের গবাদি পশু দারুণ পছন্দ করেন। ক্লুস জানান, ‘আমি সব প্রাণীর প্রতি বেশ অনুরাগী, তবে বিশেষ ভাবে যারা আলিঙ্গন করতে ভালোবাসে। তাই এত বড় একটি প্রাণীকে আলিঙ্গন করতে পারাটা আমার জন্য সত্যিই দারুণ একটি অভিজ্ঞতা। তার স্ত্রী এমা ক্লুস জানান, ‘তাদের ব্রাশ করা খুবই সহজ। প্রথমে আমার মনেই হয়নি এটি আমার কাছে বেশ প্রশান্তির মনে হবে। তবে এরা খুবই আদুরে হয়। এই অভিজ্ঞতা—দারুণ একটা থেরাপি বটে।’



অধিবেশন শেষ হলে, আগত দর্শনার্থীদের গোয়ালঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রোদের আলোয় মোরাগ অপেক্ষা করে। অতিথীরা তার নরম লোমশ বুকে হাত বুলিয়ে আদর করলে মোরাগ আকাশের দিকে তার মাথা বাড়িয়ে দেয়। আগত মানব সাথীদের কাছ থেকে পাওয়া এই আদরে ওর মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা যায় এবং ওর মুখে আনন্দ ফুটে ওঠে।


এমএল/