আমার খোঁজ কেউ নিলো না, আদিবাসী বৃদ্ধার আর্তি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:১০ পিএম, ৯ই ডিসেম্বর ২০২৩


আমার খোঁজ কেউ নিলো না, আদিবাসী বৃদ্ধার আর্তি
আদিবাসী পরিবার। ছবি: জনবাণী

“কাজ করতি পারলি খাই না করলি না খ্যায়া থাহি। সরকার কত্তো কিছু দিলো, আমার খোঁজ কেউ নিলো না” বলতে বলতে অসহায় বৃদ্ধা আরতি মালোর দু’চোখে গড়িয়ে পড়ে পানি।পেটে দু’বেলা জুটে না খাবার, নেই মাথা গোজার ঠাঁই। জরাজীর্ণ নরবড়ে ছোনের কুড়ে ঘর। সে ঘরে ১৫ বছর বসবাস করে আসছে আরতি মালোর ৪ সদস্যের পরিবার। 


সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ধামাইনগর গ্রামের আরতি মালোর মেয়ে শিমা মালো।বিয়ের পর ছেলে মেয়ে হয় তার । হঠাৎ তার স্বামী ২য় বিয়ে করে নতুন ঘর সংসারে মেতে ওঠে । কোথাও ঠাঁই না পেয়ে বৃদ্ধা মায়ের সাথে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছে।


আরও পড়ুন: ঘোড়াঘাটে মাদকসহ আদিবাসী নারী আটক


ভাঙ্গা ও জরাজীর্ণ ঘরে নেই শোয়ার বালিশ, নেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। ছোনের জীর্ণ ঘরের ভিতরে বসবাসের উপযোগী না। ঝড় বৃষ্টি এলেই অন্যের ঘরে আশ্রয় নিতে হয় তাদের।বৃদ্ধা মা,ছোট ছেলে ও পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা মেয়েকে নিয়ে মায়ের সাথেই জরাজীর্ণ ঘরে থাকছেন শিমা মালো। আর্থিক দৈন্যতার জন্য ঘর বাঁধার সামর্থ্য নেই তাদের।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধামাইনগর বাজারের পার্শে রাস্তার সাথে জরাজীর্ণ ছোনের ঘর। ঘরে এলোমেলো পড়ে আছে পুরনো কাপড়-চোপড়। ঘরের এককোণে চুলা, আর ভিতরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাঁড়ি-পাতিল।


এসব নিয়েই তাদের সংসার।কষ্টের জীবনের কথা জানতে চাইলে আদিবাসী শিমা মালো বলেন, ‘বাবারে খুব কষ্ট করে আছি। রাতে ঘরে থাকার মতো কোন পরিবেশ নেই। আমি এই ভাঙ্গাচুরা ঘরে খুবই কষ্ট করে থাকি। এই শীতে চার পাশ দিয়ে হু হু করে বাতাশ ঢুকে পড়ে। 


এমনকি সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের উপরের ছোনের ছাউনি থেকে পানি পড়ে, ঘরের ভিতরের সব কিছু ভিজে যায়। বৃদ্ধা মা ,আমি আমার মেয়ে আর ছেলে কোন রকম বসে থাকি। যাতে রাতটা কেটে যায়। কাজ করতে সমস্যা হয়। অনেক কষ্টে আমি মেয়ে মানুষ মাঠে কাজ করি। শরীর আর কুলায় না। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারি না। এসময় তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন।সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এখানে সরকারের খাস জায়গায় আছি ১৫ বছর ধরে। ওখানে ঘর দিলে খাবো কি? আমি যদি এখান থেকে অন্য জায়গায় যাই। তাহলে আমাকে কাজ কে দিবে? কাজের জন্য এখানে থাকি। যদি সরকারি ভাবে এই জায়গাতে একটা ঘর দিতো তাহলে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম। এছাড়াও আমি সরকারি কোন ধরনের সহযোগিতা পায়নি।


শিমা মালো আরো জানান, অনেক সময় সাহেবরা আমার ভাঙ্গা ঘর দেখে মেরামত করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মৃত্যুর পর আর আমার ঘরের দরকার নেই। প্রতিবেশী আজিজুল ইসলাম জানান, বর্তমান ডিজিটাল যুগে সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে এমন জরাজীর্ণ ঘর আছে বলে আমার জানা নেই। 


আরও পড়ুন: আদিবাসীদের নিয়ে ঠাট্রা করে বিপাকে রাখি


মানবিক কারণে এই অসহায় পরিবারের জন্য সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।আরেক বাসীন্দা রেজাউল করিম জানান, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরেই দেখছি আরতি মালো অত্যন্ত দুঃখে কষ্টে জীবন যাপন করছে। তাকে দেখার মতো কেউই নাই। মেয়ে আর নাতি নাতনি নিয়ে বসবাস করছে। সামনে শীতকাল,তার পর আসবে বর্ষাকাল সে কোথায় থাকবে? থাকার পরিস্থিতিও নাই। 


তাকে সরকারি বা বে সরকারিভাবে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।ধামাইনগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রোকসানা খানম বলেন,পরিবারটি খুবই অসহায়। শিমা মালোর ছেলে মেয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে।দেশের বিত্তবানদের প্রতি এই পরিবারটিকে সহযোগিতা করার অনুরোধ রইলো।


জানতে চাইলে ধামাইনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাইসুল হাসান সুমন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে অসহায় শিমা মালোর ঘর বরাদ্দের চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসার তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন,সরকারিভাবে রায়গঞ্জ উপজেলায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীন ও অসহায়দের মাঝে আশ্রয়নের ঘর দেওয়া হয়েছে। শিমা মালো যদি আমাদের কাছে আবেদন করেন তাহলে তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।


আরএক্স/