ভোক্তা অধিকারের সচেতনতামূলক সভা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৩০ অপরাহ্ন, ১০ই ডিসেম্বর ২০২৩


ভোক্তা অধিকারের সচেতনতামূলক সভা
ছবি: জনবাণী

আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার এসোসিয়েশন, খুচরা ও পাইকারি ফল ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 


রবিবার ( ১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ( ১ কারওয়ান বাজার, টিসিবি ভবন-৮ম তলা, ঢাকা)  এ সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

বর্ণিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান। 


সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও পরিচালক  ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেনসহ প্রধান কার্যালয়ের, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ক্যাবের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। 

  

সভায় ফলের দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, আমদানিকৃত ফলের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য না থাকা, মোড়কজাত ফলের মোড়কে তথ্য(খুচরা মূল্য, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, পরিমাণ ইত্যাদি) উল্লেখ না থাকা, ওজনে কারচুপি বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি করা, ফলের প্যাকেটের অতিরিক্ত ওজন, ভালো ফলের সাথে খাবার অনুপযোগী ফল মিশ্রিত করে বিক্রয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

   

মহাপরিচালক বলেন, রমজান মাসে সাধারণত ফলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এ সুযোগে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ফলের মূল্য বৃদ্ধি করে থাকে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীগণ অনেক সংগ্রাম করে ব্যবসা করে থাকেন। তাঁরা লাভ করবেন সেটা স্বাভাবিক তবে সেটা যেন যৌক্তিক হয় । তিনি আলোচনায় বলেন, গত বছর ২০ নভেম্বর ২০২২ তারিখ ফল ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়। সেখানেও ফল ব্যবসায়ীগণ ফলের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একই সমস্যার কথা বলেছিলেন।


উক্ত সভার প্রতিবেদনে ৮টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছিলঃ   

১। অতি বিলাসবহুল ফল আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে এবং বিদেশী ফলগুলো দেশে উৎপাদন করা যায় কিনা সে বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

২। বিদেশী ফল আমদানি সীমিত করতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো পুর্নগঠন/পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

৩। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এলসি খোলার ক্ষেত্রে আমদানিকৃত ফলের ১০০% প্যাকেটে আমদানিকারকের তথ্যসহ আবশ্যকীয় সকল তথ্য উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে।

৪। আমদানিকৃত ফলের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য এবং সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, পরিমাণ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ না থাকার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থার তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।

৫। ফল ক্রয় বিক্রয়ে পাকা ভাউচার (ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানাসহ মুদ্রতি রসিদ) প্রদান/সংরক্ষণ/প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে হবে। 

৬। আসন্ন পবিত্র রমজানে খেজুর, মালটা, আপেল, আঙ্গুর, কমলার মত ফলের চাহিদা মেটাতে এধরণের ফল আমদানীর জন্য এখন থেকেই এলসি খোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭। যারা নিয়মিত ফল ব্যবসায়ী তাঁরা যেন এলসি খোলার ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখীন না হোন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

৮। ফলের মান ঠিক রাখতে হিমাগারগুলো (Cold Storage) সঠিক তাপমাত্রা (Cold Chain) মেনে চলছে কিনা তা তদারকি করতে হবে।


তিনি বলেন, এই মতবিনিময় সভার ফলোআপ সভা অনুষ্ঠিত হয় ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ।

তিনি আজকের সচেতনতামূলক সভা আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, এই সভায় আমরা ফল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য শুনব। ফল বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনয়নসহ ফলের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাই এই সচেতনতামূলক সভার লক্ষ্য।   


আলোচনায় বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত জুন- ২০২৩ ইং জাতীয় বাজেটে সকল ধরনের খেজুর আমদানিতে যে শূল্কায়ন মূল্য ধরা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক

বাজারমূল্য থেকেও অস্বাভাবিক। এমনকি জাতীয় বাজেটে খেজুরকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে অন্তর্ভূক্তি করা হয়েছে যা আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়। এছাড়াও খেজুরের শূল্কায়ন মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের আমদানিতে বিদ্যমান উচ্চ শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন আসন্ন পবিত্র রমজানে বিশেষত খেজুরের চাহিদা মেটাতে এখনই এলসি খুলতে হবে। অন্যথায় রমজানের কাছাকাছি সময়ে এলসি খোলা হলে সময়মত এসব ফল আমদানি করে সরবরাহ ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। তখন চাহিদা অনুসারে বাজারে ফলের সরবরাহ কম থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না মর্মেও আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। 

 

এছাড়াও ফল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয় ফল আমদানির ক্ষেত্রে কন্টেইনার এর ডিউটি বৃদ্ধি, ডলার এর মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খোলার সমস্যা ইত্যাদি কারণে বর্তমানে ফলের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।   


সভায় ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার বলেন, সাধারণ ভোক্তাগন পুষ্টিগুণের কারণে ও রোগীর পথ্য হিসেবে সাধারণত ফল ক্রয় করে থাকেন। ফল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও  ভারতের মত সহনীয় পর্যায়ে শুল্কারোপ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পাকা ভাউচারের এর মাধ্যমে মনিটরিং কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।  


আলোচনায় বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও ব্যবসায়ীগণ অযৌক্তিক লাভ করলে তার প্রভাব পণ্যের মূল্য হ্রাসে পড়বে না। তিনি খেজুরের উপর শুল্ক হ্রাসের জন্য বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বরাবর আবেদন করার এবং পত্রের অনুলিপি কমিশনের প্রধান বরাবর প্রেরণ করার পরামর্শ প্রদান করেন।  


আরও পড়ুন: শ্রীনগরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে জরিমানা


অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষনাগার) জনাব ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ আলোচনায় ফলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে উচ্চ শুল্কের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, অধিদপ্তর শুল্ক নির্ধারণ করে না। তিনি আরও বলেন, অধিদপ্তর আপনাদের সুপারিশ সরকারের নিকট তুলে ধরবে।  তিনি ফল ব্যবসায়ীদের যুক্তিসঙ্গত লাভ করার মাধ্যমে আসন্ন রমজানে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ফলকে সহজলভ্য করার অনুরোধ জানান।  


অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আজকের এই সচেতনতামূলক সভায় আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি খেজুরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজান আসলে পণ্য বিক্রয়ে মূল্য ছাড় থাকলেও আমাদের দেশে তা দেখা যায় না। এক্ষেত্রে দেখা যায় সুপারশুপ গুলো কিছুটা মূল্য ছাড় দেওয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন, এই সভার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য। 


মহাপরিচালক আলোচনায় ব্যবসায়ীদের পবিত্র রমজানে সীমিত লাভ করে ব্যবসা করাসহ ক্রেতাদের প্রতিশ্রুত ফল দেওয়া, মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা, বিলাসী ফলের চেয়ে রমজানে প্রয়োজনীয় ফল আমদানিতে গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। 



আরও পড়ুন: খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ করতে চায় ভোক্তা অধিকার 


মুক্ত আলোচনায় তিনি সভায় উপস্থিত সদস্যগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। 


সভার শেষ পর্যায়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খেজুর আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীগণ খেজুরের বর্তমান মজুদ সম্পর্কে তথ্য প্রতিবেদন আকারে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রদান করার নির্দেশিনা দেন। মহাপরিচালক জানান আমি সরকারের নিকট সুপারিশ করব বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে  খেজুরের উপর আরোপিত শুল্কের বিষয়ে যেন বিশ্লেষনধর্মী গবেষণা করা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বরাবর পত্রের মাধ্যমে তাদের সমস্যা জানানোর কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ফল ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যবসায়ীদের অবশ্যই পাকা ভাউচার (ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানাসহ মুদ্রিত রশিদ) নিশ্চিত করতে হবে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পাকা ভাউচার নিশ্চিত করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও খেজুরের ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় ও সরবারাহ স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ করা হবে। তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে বাজারের প্রকৃত চিত্র জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান। 


মহাপরিচালক বলেন, অধিদপ্তর সৎ ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। তিনি সরকারি বিধি-বিধান ও সভার নির্দেশনা পালনে কেউ অসহযোগিতা করলে ব্যবসায়ীদের তা অধিদপ্তরের নজরে আনতে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ প্রদান করেন। পরিশেষে তিনি সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


জেবি/এসবি