বাজার চলছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেই
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:১৮ অপরাহ্ন, ১৪ই ডিসেম্বর ২০২৩
যশোরে পেঁয়াজের বাজার চলছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেই। প্রশাসনকে থোড়াইকেয়ার করছে এই সিন্ডিকেট। একই পেঁয়াজ একেকজন একেক দামে বিক্রি করছেন। যে যার মতো ক্রেতার পকেট কাটছেন।
এ কারণে বাজারে ঢুকেই হোঁচট খাচ্ছেন ক্রেতা। হচ্ছেন হতাশ। ক্রেতাদের প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর মিলছে না। ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের প্রশ্ন, ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারে প্রবেশ করার সাথে সাথে দাম কমে যায়, আবার বাজার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে দাম বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে দোকানে পেঁয়াজ থাকলেও দাম অনেক বেশি
বর্তমানে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সেই ভেল্কিবাজি চলছে। ভারত আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত রপ্তানি করবে না বলে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। সেই আঁচ লাগে যশোরের বিভিন্ন বাজারে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মঙ্গলবার রাতে যশোরের বড় বাজার ও হাটখোলায় অভিযান চালায়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আহাদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অভিযান চলাকালে সব ধরনের পেঁয়াজ খুচরা ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
ওই সময় বাজারে থাকা ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তিফিরে আসে। কিন্তু তাদের এই স্বস্তিবেশি সময় স্থায়ী হয়নি। ঘুম থেকে উঠেই ভেল্কিবাজি দেখা যায়। দেশি কাঁচা পেঁয়াজ একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি করেন যশোরের ব্যবসায়ীরা। হাটখোলা রোড ও বড়বাজারের পেঁয়াজের দোকানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশি কাঁচা পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তবে, কোথাও কোথাও ৮০-৯০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হতে দেখা যায়। ভারতীয় পেঁয়াজও একই দামে বিক্রি হয়। কিন্তু দাম কমেনি দেশি শুকনো পেঁয়াজে। যশোরের অধিকাংশ দোকানে শুকনো পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়। দু’একটি দোকানে ১৫০ টাকায়ও এই পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়। যদিও সেই পেঁয়াজের মান তুলনামূলক কম।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের অভিযান
দুপুরের পর বড় বাজারের একাধিক আড়তে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কেনা রশিদ দেখতে চাইলে কেউই দেখাতে পারেননি। তবে, হাটখোলা রোডের নিউ আমিন এন্ড সন্সের মালিক বাদশা বলেন, ‘আজ পেঁয়াজ পাইকারি এবং খুচরা ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। কেনা এবং বিক্রি রশিদ আছে।’
বাবু নামে বড়বাজারের একজন খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, ‘ভাই আমাদের কাছে দাম জানতে আসেন কেন। আমরা যে রকম দামে কিনি সেইভাবে বিক্রি করি। পারলে ফড়িয়া-আড়তদারদের কাছে যান।’ হাটখোলা রোডের মোহাম্মদ আলী নামে এক বিক্রেতার কাছে দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ কাঁচা পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, এক দোকানে ১০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও তার ঠিক পাশের দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আবার একই পেঁয়াজ কিছু দূরের কোনো দোকানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার এই পেঁয়াজ এক কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজারে প্রতি কেজি পাঁচ-দশ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ যেন ভেল্কিবাজি। একই মোকাম কিংবা আড়ৎ থেকে কেনা পেঁয়াজ কেন ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে-এমন প্রশ্নের উত্তর কোনো ব্যবসায়ীই দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জেলা বাজার কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজ বাজারের উপর দৃষ্টি রাখছি। ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। যশোরের বড়বাজারসহ অন্যান্য বাজারের পেঁয়াজের দোকানগুলোতে আজও অভিযান চলতে পারে। যদি কেনা রশিদ থেকে অনেক বেশি দামে কেউ বিক্রি করে তাহলে তাদেরকে বড় ধরনের জরিমানা করা হবে। যাতে এ ধরনের অপকর্ম ফের করতে না পারে।’
আরএক্স/