দুয়ারে দাঁড়িয়ে আশার আলো রামগড় স্থলবন্দর
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের মহকুমা শহর খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা। ঐতিহাসিক রামগড় বহু বছর কিছুটা আড়ালে থাকলেও বিগত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়িসহ দেশের মানুষের নজরে। কারণ সেখানে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ ক্ষেত্র রামগড় স্থল বন্দর।
ইতিমধ্যে চলতি বছরের ৯ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রামগড়ের ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত প্রথম মৈত্রি সেতু-১ উদ্বোধন করেন। স্থল বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও সেতু দিয়ে দুই দেশের যোগাযোগ শুরু হয়নি।
সেতু উদ্বোধন, পরিদর্শন, দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও চলমান কাজ মিলে চলতি বছরও জেলার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নির্মাণাধীন রামগড় স্থল বন্দর। এটি চালু হলে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। পরিবর্তন হতে পারে আর্থ-সামাজিক অবস্থার।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুটির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। খাগড়াছড়ির রামগড়ে মহামুনি এলাকায় ৪১২ মিটার দৈর্ঘ এবং ১৪. ৮০ মিটার প্রস্থ আন্তর্জাতিক সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। ফেনীর ওপর মূল সেতুটি ১৮০ মিটারের। দুই পারেই থাকছে ৯০ মিটার করে। সেতুর সঙ্গে থাকছে ২৩২ মিটারের সহযোগী সেতু। এ সেতুর মোট পিলার ১২টি। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ ৮ টি ও ভারতের অংশে ৪টি।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়ে ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীনেশচন্দ্র আর আগরওয়াল ইনফ্রাকম প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে কাজটি হয়েছে। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মূল সেতুটির কাজ শেষ হয়।
স্থলবন্দর চালু হলে পশ্চাৎপদ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বাঙালি সকল জনগোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে বলে আশা স্থানীয়দের। এখানকার মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের জন্যও স্থলবন্দর হবে গেটওয়ে।
রামগড়ের স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন লাভলু জানান, ত্রিপুরার সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। এই স্থল বন্দর দিয়ে আমাদের দুই দেশের অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন তৈরি হবে। এতে বাড়বে দুই দেশের আমদানি রপ্তানি। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর নিয়ে পাহাড়বাসীর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড়ের মহামুনি এলাকায় অধিগ্রহণকৃত ১০ একর জায়গায় বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিস, চেক পোস্ট, ওয়্যার হাউজ, আবাসিক ভবন, শেডসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মনিকো লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা।
গত ৬ নভেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরুর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল রামগড়ে স্থলবন্দরের স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরিদর্শনকালে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ‘ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হওয়ার পরই অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এ ব্যয় বহন করবে। ’ তিনি আরো বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ এবং ত্রিপুরাসহ উত্তরপূর্ব রাজ্যের অনেকেই এ স্থলবন্দর ব্যবহার করবে ভ্রমণে। সবচেয়ে বড় কথা, কানেকটিভিটি বাড়বে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, আমাদের বিশ্বাস স্থলবন্দরটি চালু হলে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃস্টি হবে। সার্বিকভাবে পাবর্ত্য এলাকার জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, রামগড় স্থল বন্দর নিয়ে খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রামসহ দেশের ব্যবসায়ীরা খোঁজ খবর রাখছেন। স্থল বন্দরটি চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। বদলে যাবে পাহাড়ের দৃশ্যপট।
রামগড় স্থলবন্দর নিয়ে মানুষের যে আগ্রহ তা দুই দেশের বাণিজ্যিক, পর্যটন ও যোগাযোগ সর্ম্পক সুদৃঢ় হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।