পঞ্চগড়ে মেঘের আড়ালে সূর্য, জনজীবন দুর্ভোগে
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, ১২ই জানুয়ারী ২০২৪
পৌষের শেষ সময়ে এসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার সাথে যোগ হয়েছে হিমেল হাওয়া। গত পাঁচ দিন ধরে মেঘের আড়ালে সূর্য। রোদহীন দিনভর শীতের দুর্ভোগে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়ের জনজীবন।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এখানকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টার সময় রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ সকালে তাপমাত্রার রেকর্ডের তথ্যটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান।
তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে মেঘ-কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়েছে সূর্য। ঘন কুয়াশার কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। গত দুই দিন ধরেই তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা নিম্নমুখী আছে। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা অনেক বেশি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের মাঝে সেনাবাহিনীর কম্বল বিতরণ
জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, গত পাঁচ দিন কুয়াশার আড়ালে ঢাকা রয়েছে সূর্যীমামা। এদিন সকাল থেকেই বিরাজ করছে মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন ইনকাম। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টেই দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন নিম্ন আয়ের জনগণ। আর বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরাও। তারাও হাড়কাপুনি ঠান্ডার কারণে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। এ বাদেও শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মিলছে না প্রয়োজনীয় শীতের গরম কাপড়। রাস্তায় চলা ভবঘুরে মানুষরাও পড়েছে অনেক দুর্ভোগে।
অন্যদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যে। সন্ধ্যার পর পর আবার ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কোলাহলহীন হয়ে পড়ে শহর ও গ্রামের দোকানপাট গুলো। বাজারগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় কাগজের কাটন, টায়ার ও কাগজে আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায় অনেকের।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) নিয়ে গত চার দিন ধরে সকাল থেকে দেখা মিলছে না সূর্যের। এতে করে পরিবারসহ বেশ বিপাকে পড়েছে গৃহপালিত প্রাণীরাও। ভোর-সকালে কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। কাজ করার সময় হাত-পা অবশ হয়ে আসে। শীতের তীব্রতায় ছেলে-মেয়েরাও ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না। সন্ধ্যার পর থেকই পুরো রাতে মনে হয় বরফ পড়ে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানা, ঘরের মেঝে পর্যন্ত বরফের মতো ঠান্ডা মনে হয়। বাড়ির গৃহিণীদের কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে। আয় রোজগার কমে যাওয়ায় অনেকে পরিবারের কথা চিন্তা করেই এই হাড় কাঁপা শীতকে উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন।
জেলার তেঁতুলিয়ার সদর এলাকার আলাউদ্দিন, হোসেন আলী ও আবুল কালামসহ কয়েকজন দিনমুজুর শ্রমিক জানান, গত কয়েক দিন ধরে মেঘ-কুয়াশায় দেখা যাচ্ছে না এখানকার সূর্য। কাজ-কাম করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাসের কারণে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে ওঠে।
আইনুল, জুয়েল ও সায়েদসহ কয়েকজন পাথর শ্রমিক বলেন, একদিকে অনেক বেশি ঠান্ডা। তার মধ্যে নদীর পানি বরফের মত হয়ে আছে। শীতে বসে থাকারও কোনো উপায় নেই। তবে ঠান্ডায় ঘরে বসে থাকলে তো পেটে ভাত যাবে না। পেটের ক্ষুধা তো আর শীত মানে না। তাই পরিবারের কথা মাথাই রেখেই নদীতে পাথর তুলতে নামছি। এই পাথরই আমাদের রুটি-রুজি। কাজ না করলে পরিবার নিয়ে অনেকে কষ্টে থাকতে হয়।
ভ্যানচালক হাসমত আলী, হামিদ আলী ও দেলোয়ার জানান, এই শীতে ইনকাম একেবারেই কমে গেছে। হাড় কাঁপানো শীতের কারণে সহজে কেউ ভ্যানে চড়তে চায় না। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেলার মুখ দেখা যাচ্ছে না। এতে আয় রোজগার অনেক কমে গেছে।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে নিউমোনিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে দূরে থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকেরা।
এমএল/