শীতের সময় শিশুর ডায়রিয়া, জ্বর-ঠান্ডায় যা করণীয়
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:১৬ অপরাহ্ন, ১৪ই জানুয়ারী ২০২৪
শীতের সময় শিশুদের অসুখ-বিসুখ যেন লেগেই থাকে। এ সময় শিশুদের কয়েকটি সাধারণ রোগের মধ্যে ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, ভাইরাল জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, কানে সংক্রমণ ও ফ্লু এসব অন্যতম। তাই এ সময় শিশুদের বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যেন শীতের বৈরী আবওহাওয়া শিশুর নাজুক শরীরে কোনো প্রকার বিরূপ প্রভাব না ফেলে। শীতের সময় ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলো থেকে শিশুকে দূরে রাখতে জেনে নিন কিছু বিষয় সম্পর্কে।
সাধারণত বুকের দুধ পান করা ছয় মাস বয়সী শিশু থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদেরও কোল্ড ডায়রিয়া বেশি হতে পারে। তবে বুকের দুধ খাওয়ার কারণে তাদের ডায়রিয়া তেমন বোঝা যায় না। এ সময় কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ডায়রিয়া ঠেকানো সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে পুরোপুরি সেরে যায়।
আরও পড়ুন: শীতের সময় শিশুর বিশেষ যত্ন নিন
কারণ ও প্রতিকার
কোল্ড ডায়রিয়ার তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকলেও বেশির ভাগ সময়ে ‘এডিনো’ ভাইরাসকেই দায়ী করা হয়। এ ভাইরাস যেমন ঠান্ডা ঘটায়, তেমন ডায়রিয়াও ঘটায়। কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুর ক্ষেত্রে তেমন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। ঘরোয়া নিয়মে যত্ন করলেই সুস্থ থাকা যায়। কোল্ড ডায়রিয়ার চিকিৎসা প্রক্রিয়া খুবই সাধারণ এবং মুখে খাওয়ার স্যালাইন ও জিংক খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া সেরে যেতে সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মত সময় লাগে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের মতো সময়ও লাগতে পারে।
প্রতিরোধের জন্য যা করণীয়
যেহেতু ঠান্ডার জন্য কোল্ড ডায়রিয়া হয়, সেহেতু যেকোনোভাবেই হোক শীতের সময়টুকু শিশুকে ঠান্ডা বা শীতের অতিরিক্ত প্রকোপ থেকে বিশেষ করে রক্ষা করতে হবে। সব সময় পর্যাপ্ত গরম পোশাক দিয়ে শিশুকে ঢেকে রাখতে হবে। আবার এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশু ঘেমে না যায়। স্যাঁতসেঁতে রুমে বা ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশুকে রাখা যাবে না। শীতে শিশুর গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর দরকার নেই। সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর দেখা দিলেই বিশেষ সতর্ক হতে হবে। এ সময় বাচ্চার নাকে-মুখে রুমাল ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন সাপেক্ষে নেবুলাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। শিশুর খাবার পানি ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে।
আরও পড়ুন: শীতকালে সুস্থ থাকতে যেসব ফল ও সবজি খাবেন
হাসপাতালে কোন সময় নেবেন
কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। নয়তো বড়ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। খুব বেশি পানির মতো পাতলা পায়খানা অনবরত হতে থাকলে শরীর অতিরিক্ত পানিশূন্য হয়ে নিস্তেজ হয়ে যায়। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা একেবারেই প্রস্রাব না হলে এবং মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে গেলে। স্যালাইন বা অন্য কোনো খাবার একেবারেই খেতে না পারলে। খুব বেশি পরিমাণে বমি করলে, এমনকি স্যালাইন খেয়েও বমি হলে বা অবস্থা বেশি খারাপ মনে হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানোর দরকার হয়।
জ্বর-ঠান্ডা-
শীতের সময় বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে যায় খুব সহজেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই এই ধরনের সমস্যার শুরু হয়। এসময় প্রাপ্তবয়স্কদেরই নানা ধরনের অসুখের মুখোমুখি হতে হয়। আর সেখানে বাচ্চাদের ইমিউনিটি এমনিতেই অনেকটা কম থাকে আর সেই কারণেই খুব তাড়াতাড়ি তারা জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়। আর এসব সর্দি কাশি থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললেই হবে।
আরও পড়ুন: পেইনকিলার কাদের জন্য ক্ষতিকর?
ঠান্ডা ও জ্বর
যদি শিশুর শরীরে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর ওঠে, চোখ লালবর্ণ হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা, কান চুলকানো ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায় তাহলে কালক্ষেপণ না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। এ ছাড়াও রাতে ঘুমোনোর সময় নাক বন্ধ হয়ে আসা, শরীরে ব্যথা ও খেতে না পারা নিউমনিয়ার লক্ষণ। শিশু যেনো পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। শিশু যেন সঠিক মাত্রায় মায়ের দুধ পান করতে পারে সে দিকেও লক্ষ্য রাখুন। মায়ের বুকের দুধ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। তাই মায়েরও উচিত প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ভিটামিন সি খাওয়া।
‘ফ্লু’র লক্ষণ ও সাবধানতা
হঠাৎ জ্বর ওঠা, ক্লান্তি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শুকনো কাশি ও বমির উপসর্গ দেখা দিলে বার বার শিশুকে খাওয়ান। রুমে পর্যাপ্ত আলো চলাচলের ব্যবস্থা করুন। একদিন পর পর কুসুম গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান। গোসল যেন সকাল ও দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে হয়। এবং সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শীতে প্রায় কমবেশি সবারই ঠান্ডা-কাশি লেগে থাকে। ফলে আমাদের হাতে অনেক জীবাণু থাকে। তাই সবসময় হাত পরিষ্কার রাখতে সজাগ থাকুন। হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় নাকে-মুখে রুমাল ব্যবহার করুন। শিশুর হাতও হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন শিশু যেন হাত মুখে না লাগায়।
আরও পড়ুন: ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণ ও প্রতিকার
বিশেষ সর্তকতা ও দৈনন্দিন যত্ন
ঠান্ডা ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে শিশুকে দূরে রাখবেন। ঠিক সময়মতো শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখুন। শিশুর কানে ইনফেকশন দেখা দিলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধাপ্রাপ্ত হলে বা নিশ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঠান্ডা লাগলে শিশুর শরীর অলিভ অয়েল তেল, পাম অয়েল বা সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত চলাচল বাড়বে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও সরিষার তেল শিশুর শরীরকে গরম রাখে, যা শিশুর পক্ষে অনেক আরামদায়ক। গোসলের আগে শিশুর শরীরে তেল ম্যাসাজ করার নিয়ম সবাই জানেন। তবে গোসলের সময় ভালোকরে শিশুর ত্বক থেকে তেল তুলে ফেলতে হবে, নাহলে তেল লোমকূপের গোড়ায় জমে র্যাসের সৃষ্টি হতে পারে।
এমএল/