শীতের ভরা মৌসুমেও চড়া সবজির বাজার, গরুর মাংস ৭৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৯ অপরাহ্ন, ১৯শে জানুয়ারী ২০২৪
বিগত বছর শীতকালে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও এবার সেই চিত্রের পুরোটাই উল্টো। এ বছরে শীতের ভরা মৌসুমেও সবজির বাজার যাচ্ছে চড়া। বর্তমানে বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়তি নয়। এদিকে, ভরা মৌসুমে সবজির পাশাপাশি সব ধরনের মাছ, মাংস, মুরগির দামও তুলনামুলক অনেক বেশি। এছাড়া, সরকার গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও কে শোনে কার কথা! ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বর্তমানে ৭৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করছেন।
বাজারে সবকিছুর এমন বাড়তি দামে ক্ষুব্ধ সাধারণ শ্রেণীর ক্রেতারা। আর বিক্রেতারা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে আকস্মিক বৃষ্টিতে বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া, কয়েকদিনের তীব্র শীতে কৃষক ফসল তুলতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন বেহাল দশা দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: দেশের ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্যান্সারের জীবাণু: গবেষণা
শুক্রবারের বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়াও, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এবাদেও, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, পেঁয়াজের ফুল প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিমগুলো ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, লাল আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে কমে যায় প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম। সেই সময় দাম কমে গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয় ৫৯৫ টাকায়। পরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার পর প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে সরকার ৬৫০ টাকায়। তবে, বাজারে সরকারের এ নির্দেশনা মানার কোনো চিত্রই নজরে পড়েনি। বর্তমানে দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস দোকানিরা বিক্রি করছেন ৭৫০ টাকায়। আর প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দের বন্ধ হওয়া সকল ট্রেন চালু হবে: রেলমন্ত্রী
সেইসাথে, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কক ও লেয়ার ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, বেশ কিছু দিন ধরেই চড়া যাচ্ছে সব ধরনের মাছের দাম। আজকের বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা করে, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, ছোট টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং শোল মাছ প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শীতের এই ভরা মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি থাকায় ক্ষুব্ধ সব ধরণের ক্রেতারা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ উদ্দিন জানান, অন্যান্য বছর শীতের সময় সব ধরনের সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি থাকে। তবে এ বছর ভরা মৌসুমে সব ধরনের সবজি কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি করে। অন্যান্য বছরের এ সময়ে শিমের প্রতি কেজি থাকে ৩০ টাকা, অথচ এবার আমাদের কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বেগুন গত সপ্তাহে কিনছি প্রতি কেজি ১০০ টাকায়, আর আজকে কিনতে হলো ৮০ টাকায়। সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে ভরা মৌসুমেও অনেক বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। এতে করে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের এবং সাধারণ শ্রেণীর ক্রেতারা।
আরও পড়ুন: শিশুদের চাহিদা অনুসারে নতুন প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে: প্রতিমন্ত্রী সিমিন
একই ধরনের অভিযোগ জানিয়ে গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে বাজার করতে আসা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাজারে সব সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। আবার এর সাথে সব ধরনের মাছের দাম এতই বেড়েছে যে, আমাদের কেনার কোনো উপায় থাকে না। বিভিন্ন অজুহাতে সবসময়ই বাড়তি যাচ্ছে মাছের বাজার। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, শীতের এই সময় সবজির দাম থাকবে সবচেয়ে কম... অথচ এই সময় এসে সব ধরনের সবজির দাম অনেক বেশি।
ভরা মৌসুমেও সবজির দাম এত বেশি কেন? এ বিষয়ে একই বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন জানান, মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হঠাৎ আকস্মিক বৃষ্টিতে অনেক ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ অনেকটাই কমেছে। এছাড়া, কয়েকদিনের তীব্র শীতের জন্য কৃষকরা ক্ষেত থেকে ফসল সংগ্রহ করতে পারেনি। যে কারণে ঢাকার বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে, আর যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
তিনি আরও বলেন, মূলত কিছুদিন আগের আকস্মিক বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় এবার ভরা মৌসুমে এসেও সবজির দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সবজি নিয়ে আসার পরিবহন খরচ এবং বিভিন্ন অদৃশ্য খরচগুলোর কারণে সবজির দাম এবছরে একটু বেশিই।
এমএল/