জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২তম পাখিমেলা অনুষ্ঠিত


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:০২ অপরাহ্ন, ১৯শে জানুয়ারী ২০২৪


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২তম পাখিমেলা অনুষ্ঠিত
২২তম পাখিমেলা। ছবি: জনবাণী

সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: পাখি সংরক্ষণের গুরুত্ব, সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পাখি পর্যবেক্ষণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে, "পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হলো ২২তম পাখিমেলা।

 

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ‘পাখিমেলা-২০২৪’ এর শুভ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।পাখিমেলা ২০২৪ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে উপাচার্য বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করার স্বার্থে আরোপিত বিধি- নিষেধ মানতে হবে। 

আরও পড়ুন: জাবিতে সিনেট থেকে সিন্ডিকেটে দুজন সদস্য মনোনয়ন দাবি


ক্যাম্পাসের প্রকৃতি ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শুক্র ও শনিবার বিভিন্ন ব্যাচ ও সংগঠনের অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। ব্যাপক জনসমাগম রোধ করা সম্ভব হলে পাখির অভয়ারণ্য আরও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উপাচার্য বলেন, ক্যাম্পাসে প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রাখতে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাখিমেলা আয়োজনের প্রশংসা করে উপাচার্য তাঁর ভাষণে বলেন, পাখিমেলা পাখিকে ভালোবাসতে উৎসাহিত করে। পাখির প্রতি ভালোবাসা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাখির প্রতি সকলকে দায়িত্বশীল ও যত্নবান হতে হবে।


ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মোঃ মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী, আইসিইউএন-এর প্রতিনিধি সারোয়ার আলম দিপু, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি আরিফুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাখিমেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান।


পাখির কিচির মিচির ডাক আর পাখি প্রেমীদের সরব উপস্থিতিতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দেশের একমাত্র পাখিমেলা-২০২৪। মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। অতিথি পাখির সরব সান্নিধ্যে সারাটা দিন পার করেছে দেশী-বিদেশী অসংখ্য পাখি প্রেমী। পাখিমেলার এসব সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকাল থেকেই শীতকে উপেক্ষা করে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীরা জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ভীড় জমায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলাপ্রাঙ্গনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসব দর্শনার্থীরা ভির জমান ক্যাম্পাসে। শুক্রবার ছুটির দিনে নগরের শত-ব্যস্ততার মধ্যে অবসাদ দূর করতে জাবি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আর পাখিমেলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে কেউ এসেছে পুরো পরিবারকে নিয়ে, আবার কেউ তার প্রিয়জনের সঙ্গে এসেছে, কেউবা আবার এসেছে বন্ধুরা মিলে। তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পাখির কিচির-মিচির ও গুঞ্জন শুনতে সারাদেশের পাখিপ্রেমিরা সকাল থেকেই ভিড় জমাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কিন্তু আশানুরূপ পরিযায়ী পাখি দেখতে না পারায় হতাশ দর্শনার্থীরা।


পাখি প্রেমী এক দর্শনার্থী নোমান বিন হারুন (আইন ও বিচার বিভাগ-৪৮) বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাখির জন্যই পরিচিত। কিন্তু আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পাখির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত যানবাহনের কালো ধোঁয়া, অতিরিক্ত জনসমাগম, শব্দ দূষণ বিভিন্ন কারণে এখন আর পাখি দেখা যায় না। যানবাহনে কালো দোয়া নির্গমের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কারণে জাবিতে  ক্রমান্বয়ে  পাখির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে দূষণের মুখ থেকে ফিরে আনতে হবে তাহলে জাবিতে আবার আগের মতো পাখির পরিমাণ বেড়ে যাবে। 


দিনব্যাপী এই পাখিমেলায় নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্র পত্রিকা প্রদর্শনী, পাখি বিষয়ক আলোচনা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা (অডিও ও ভিডিও এর মাধ্যমে) ও সবার জন্য উন্মুক্ত পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা।


আরও পড়ুন: জাবিতে শিক্ষক সমিতি নিবার্চনে দুই প্যানেলের লড়াই


এছাড়া বিগত এক বছরে গণমাধ্যমে পাখি ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে পাখি সংরক্ষণে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখায় সংবাদকর্মীদের 'বিগ বার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড', ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’, 'স্পেশাল রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড' এবং বিগত এক বছরে বাংলাদেশের পাখির ওপর সায়েন্টিফিক জার্নাল, প্রকাশিত প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে ‘সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।


উল্লেখ্য, ২০০০ সালে 'বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব' এর উদ্যোগে  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাখি মেলার আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে পাখি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য ২০০১ সাল থেকে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে পাখি মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। মেলার আয়োজনে সহায়তা করছে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং বাংলাদেশ বন বিভাগ।


আরএক্স/