ভেড়ামারায় ১ ও ২ টাকার কয়েন নিতে চান না কেউ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২৪


ভেড়ামারায় ১ ও ২ টাকার কয়েন নিতে চান না কেউ
১ ও ২ টাকার কয়েন। ছবি: জনবাণী

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এক ও  দুই টাকার ধাতব মুদ্রা বা কয়েন একেবারেই অচল হয়ে গেছে। এমনকি ভিক্ষুককে দিতে চাইলেও দুই টাকার কয়েন নিতে চান না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই কয়েন অচল না হলেও জেলার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকও তা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রীতিমতো দুর্ভোগে পড়েছেন এই উপজলোর মানুষ।


এ দিকে হাটবাজারে দোকানিরাও কেনাবেচায় এক ও দুই টাকার কয়েন নিতে অনীহা দেখানোয় বিপাকে সাধারণ মানুষ। রিকশা, ভ্যান বা মুদি দোকানদারেরাও কেনাকাটায় এক ও দুই টাকার কয়েন নিতে অনাগ্রহী। হাটবাজারসহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক দুই টাকার কয়েন দেখলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে লেগে যায় তর্ক। কোনও পক্ষই এসব ধাতব মুদ্রা নিতে রাজি হয় না। উপজেলায় বিভিন্ন জনার সাথে কথা হলে তারা বলেন, এক দুই টাকার কয়েন ভেড়ামারায় অচল মুদ্রা। এখান কার কোন মানুষই এই কয়েন নিতে চাই না


আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় নাবালক শিশু হত্যার দায়ে একজনের যাবজ্জীবন


লেনদেন বা কেনাকাটায় কাগজের নোটের পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত যেকোনও মূল্যমানের কয়েন যে-কেউ নিতে বাধ্য। কিন্তু ভেড়ামারায় এক/ দুই টাকার কয়েন লেনদেন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে পড়ে আছে হাজার হাজার টাকার কয়েন।


ভেড়ামারার কলেজ বাজার। মধ্য বাজার। পৌর মার্কেট বাজারের একাধিক মুদি ব্যবসায়ী জানান, এক, দুই টাকার কয়েন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন তাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কয়েন নিতে বাধ্য হওয়া সম্পর্কে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, অসংখ্য পণ্য রয়েছে যেগুলো বিক্রি করতে হলে খুচরা টাকার প্রয়োজন। কিন্তু উপজেলা শহরে এক দুই টাকার কয়েন কেউ নিতে চান না। তবে কেন কয়েন নিতে সবার এত অনীহা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কেউ। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর নেই বলেই আজ এই অবস্থা।


চা-দোকানি মমিন ও ঝন্টু মিয়া জানান, এক কাপ র-চা পাঁচ টাকা ও দুধ চা ছয় টাকায় বিক্রি হয়। তাই চা পান শেষে সিংহভাগ ক্রেতা মূল্য হিসেবে কয়েন দেন। এ সময় এক ও দুই টাকার কয়েন অনেকে দিলেও তা নেওয়া হয় না। কারণ এই কয়েন ভেড়ামারায় চলে না। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দুই টাকার কয়েন নিতে চান না। সব ধরনের পণ্যের মহাজনরা কয়েন দেখলে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অনেক সময় মহাজনকে কর্মচারীরা দুই টাকার কয়েন দিলে তা ফেলে দেন।


ভেড়ামারা রেলওয়ে ষ্টেশনের আজমল বলেন, কয়েক বছর যাবৎ এখানে এক ও দুই টাকার কয়েন অচল হয়ে গেছে। এখন কেউ নিতে চান না। অসংখ্য ব্যবসায়ীর কাছে বিপুল পরিমাণ কয়েন জমে আছে। কিন্তু এক,দুই টাকার কয়েনগুলো কোনও ব্যাংকও নিতে চাচ্ছে না।


এ ব্যাপারে এলাকার সচেতন মহল বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলায় এক দুই টাকার কয়েন চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কয়েন যে নিতে চাবে না তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ কয়েন পড়ে আছে অলস টাকা হিসেবে। এতে অর্থনীতির গতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে।


আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ট্রাক থামিয়ে ড্রাইভার ও হেলপারকে মারধর, টাকা লুট ও গাড়ি ভাংচুর


জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার সামসুল ইসলাম জানান, ভেড়ামারায় এক, দুই টাকার কয়েন কেন চলে না, এর কারণ তার জানা নেই। কেউ এই কয়েন নিতে না চাইলে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই বিষয়ে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ১ বা ২ টাকার কয়েন সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং প্রচলন আছে। ব্যাংকে আসলে আমরা নেবো। কিন্তু মার্কেটে কেন লেনদেন হচ্ছে না এটা আমি বলতে পারবো না। জেলা প্রশাসক মো. এহতেশাম রেজা বলেন, কয়েন অচলের ব্যাপারে আমি সকল ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকে কয়েন লেনদেন সচল আছে। আমার নির্দেশনা আছে কুষ্টিয়ার সকল দোকানগুলোতে যেন কয়েনে লেনদেন হয়। তারপরেও যদি কোনো দোকানদার কয়েন নিতে বা দিতে অনীহা প্রকাশ করেন, তাহলে আমরা সেসব দোকানগুলোতে অভিযান চালাবো।


আরএক্স/