মিয়ানমারের সংঘাত: সীমান্তবর্তী ১৮০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:৪০ অপরাহ্ন, ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


মিয়ানমারের সংঘাত: সীমান্তবর্তী ১৮০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে
ছবি: প্রতিনিধি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত বিরতিহীন চলছে। টানা গুলি বর্ষণ, মর্টার শেল সহ বিস্ফোরণের শব্দ কম্পন বাড়ছে সীমান্ত এলাকাজুড়ে। বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় এমন শব্দ শুনা যাচ্ছে। আর মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বসত ঘরে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের ২ টি বসত ঘরে মর্টার শেল এবং আর ৫ টি ঘরে গুলি এসে আঘাত হেনেছে। মঙ্গলবার পুরোদিন মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে ৫ বাংলাদেশী আহত হয়েছেন।


এপরিস্থিতি মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন।


পরিদর্শন শেষে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। সীমান্ত এলাকার ২৪০ পরিবারের লোকজন ঝুঁকি রয়েছেন। এর মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান এদের নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করছেন। ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী ১৫০ পরিবার নিজ উদ্যোগে নিকট স্বজনদের বাড়ি চলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। জলপাইতলী এলাকা থেকে ৩০ পরিবারেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।



আরও পড়ুন: সীমান্তে মিয়ানমারের ছোড়া গুলিতে আরেক বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ



তিনি বলেন, দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ওখানে অন্যান্যরা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এটা প্রশাসনের পক্ষে অনুরোধ।


মঙ্গলবার দুপুর থেকে মাইকিং করে বলা হচ্ছে,  তুমব্রু কোনা পাড়া, মাঝের পাড়া, ভাজা বনিয়া পাড়া, বাজার পাড়া, চাকমা হেডম্যান পাড়া,পশ্চিবকুল পাড়া, ঘুমধুম নয়াপাড়া, পূর্বপাড়া, মাধ্যম পাড়া এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।


ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজকে টানা ৫-৬দিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছে এলাকাবাসী।


আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পালিয়ে এলো বিজিপির আরও ১১১ সদস্য, ৮ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ


সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় রেখে দুটি স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসন এবং স্থানীয়  জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছে।


সীমান্তের ওপার থেকে ছুটে আসা বুলেট ও বোমার অংশে তাৎক্ষণিকভাবে হাত না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অবিস্ফোরিত বুলেট ও বোমা  বিস্ফোরণ  য়ে আহত বা নিহত  হতে পারেন সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে  সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।


জেলা প্রশাসক সোমবার মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা মর্টারশেল বিস্ফোরণে নিহত হোসনে আরা বেগমের বাড়ীতে যান এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিয়ে ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।


এসময় বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, জেলা প্রশাসন ও বিজিবির সাথে পুলিশও সর্বোচ্চ সর্তক রয়েছে।


এপরিস্থিতিতে কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।


কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সংঘাত বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বসত ঘরে। এর প্রেক্ষিতে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নিদের্শনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।


জেলা প্রশাসক বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।



জেবি/এসবি