ভেড়ামারায় গমের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪
খাদ্যশস্যের মধ্যে ধানের পরেই রয়েছে গমের স্থান। ভেড়ামারায় এক সময়ে অধীক পরিমাণে গম চাষ হতো। তবে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ এবং তামাকের দাপটে পিঁছু হটতে বাধ্য হয় গমের চাষ। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গম চাষিরা। এর পরেই বেশ কয়েকবছর মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবছর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিপুল পরিমাণ গম চাষ হয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় গম চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। ভেড়ামারায় গমের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে এখন হাসি ফুটেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। গমের বাম্পার ফলনে আশাবাদী এলাকার কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথাসময়ে কৃষকরা এবার গমের বাম্পার ফলন পাবে বলে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: শ্রীপুরে 'স্ট্রবেরি' চাষে অভাবনীয় সাফল্য
কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হলো দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা। কুষ্টিয়ার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এ ৩টি উপজেলায় ২০১৬ সালে দেখা দেয় ব্লাস্ট রোগ। সেই সময় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছিলো। এরপরেও কয়েকজন কৃষক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গম চাষ করে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকরা প্রায় মুখ ফিরিয়ে নেয়, এ চাষ থেকে। পরে এসব গম চাষের জমি দখল করে নেয় বিষবৃক্ষ তামাক।
তবে এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে আবারো গম চাষে ফিরেছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গমও বেশ ভালো হয়েছে। তবে এবছর কোথাও ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা যায়নি। কৃষকরা তামাক চাষের পরিবর্তে আবার গম চাষ শুরু করেন। এবছর চিত্রটা পাল্টে গেছে গত বারের থেকে। আর বিগত দিনের মতো চাষিরা ঝুঁকেছে গম চাষে। গম চাষ করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ ফলন হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাশরুম চাষ করে স্বপ্ন পূরণ করলেন নাছরিন খাতুন
ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের নলুয়া-দলুয়া এলাকার কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, গত বছর আমার জমিতে তামাক ছিল। আমি এবার ৬ বিঘা জমিতে বারি গম-২৮ এবং বারি গম-৩০ জাতের গম চাষ করেছি। অনান্য বছরের তুলনায় গম খুব ভালো হয়েছে। উপজেলার মওলার বিল এলাকার কৃষক মাসুদুজ্জামান মাসুদ জানান, দুই বছর আগে গম চাষ করে রোগে গম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এজন্য লোকসান হয়েছিল। এজন্য পরের বছর আর গম চাষ করিনি। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। বেশ ভালো হয়েছে। এবার কোনো রোগও হয়নি। আশা করছি গত দুই বছরের লোকসান এবার পুঁষিয়ে যাবে।
ভেড়ামারা উপজেলার ঠাকুর দৌলতপুর এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, ব্লাস্টের কারণে দুই বছর গম চাষ করিনি। এবার দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। আগের চেয়ে বেশ ভালো হয়েছে। রোগবলাই লাগেনি। দানাও বেশ ভালো। ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা জানান, বিনামূল্যে চাষীদেও মাঝে প্রণোদনার বীজ-সার বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে ২০ কেজি করে গম বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। এবছর ভেড়ামারা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ গমের চাষ হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউটিউব দেখে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল পাবনার আসলাম আলী!
চলতি মৌসুমে ভেড়ামারা উপজেলার ১৫৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এবং গম চাষ হয়েছে ১৫৯০ হেক্টর জমিতে। ফলে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৫ সালে এ অঞ্চলে গমে ব্লাস্টের আক্রমণ মহামারী আকার ধারণ করে। সেসময় এখানকার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে আমরা এ এলাকায় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করি। এতে ব্লাস্টের প্রার্দুভাব কম হয়।
ভেড়ামারা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শাহানাজ ফেরদৌসী বলেন, গত বছর থেকে আমরা আবার গম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। তারা পুনরায় গম চাষে আগ্রহ দেখিয়ে চাষ করছেন। তিনি আরো জানান, এ অঞ্চলের মাটি গম চাষের জন্য উপযুক্ত। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী জাতের গম চাষের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
এমএল/