মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:১১ অপরাহ্ন, ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গোপালগঞ্জ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব (ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক) মোঃ সাইফুল ইসলামের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি দেখার যেন কেউ নেই?
গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা থাকার সুবাদে কাশিয়ানী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম ওপর মহলের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গোপালগঞ্জ মহিলা বিষয়ক উপপরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ পৌরসভার বাস্তবায়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিদর্শনে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিগণ
সরেজমিনে গোপালগঞ্জ জেলা শহরের চাঁদমারী এলাকায় ভাড়া নেওয়া সেই অফিসে গিয়ে দেখা যায়, উপ-পরিচালকের অফিস ফটকের সামনে নেমপ্লেটে মোঃ সাইফুল ইসলাম উপ-পরিচালক লেখা রয়েছে। যদিও বা সরকারি বিধি মোতাবেক নেম প্লেটে মোঃ সাইফুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক থাকার কথা ছিলো।
এছাড়া তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার মূল দায়িত্ব কাশিয়ানী উপজেলা মহিলা বিষয়ক দপ্তরে অনিয়মিত হওয়ার ফলে সেখানকার সেবা প্রত্যাশীরা কাঙ্খিত সরকারি সেবা থেকে ধীরে ধীরে বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া সরকারি মালামাল বিশেষ করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের একটি ৮০ সিসি মোটরসাইকেল যা গোপালগঞ্জ অত্র কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকার কথা থাকলেও তিনি তা গোপনে সরিয়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা গিয়ে মোটরসাইকেলটি কোথায়? জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আছে কিন্তু অফিসে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তা দেখাতে পারেননি। এছাড়াও তিনি তার বেতন থেকে বাড়ি ভাড়া কর্তন না করেই নিয়মবহির্ভূতভাবে ভাড়া নেওয়া সরকারি অফিসেই সপরিবারে বসবাস করছেন। বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, ওয়াইফাই বিল সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা পরিবার সহ নিজে ভোগ করলেও সরকারিভাবে অফিস খরচায় সেগুলো দেখিয়ে দিচ্ছেন যা দুর্নীতির শামিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রশিক্ষণার্থীদের বিনামূল্যে ফরম দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি ফরম দিয়ে প্রতি জনের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নেন। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের ৩০ জন সদস্যদের নাস্তা বাবদ ৩০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি ২০ জনকে নগদ অর্থ না দিয়ে ২০ টাকার মধ্যে নাস্তা দেন। ভিজিডি কার্ড এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি উৎকোচের বিনিময়ে অফিসে বসেই যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের সরকারি ভাতা পেতে সুপারিশ করেন। এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনলাইনের মাধ্যমে নতুন সমিতির নিবন্ধন করার নীতিমালা থাকলেও তিনি উৎকোচের বিনিময়ে অফিসে বসেই নিবন্ধন দেন এবং সমিতির নামে সরকারি অনুদান পাইয়ে দিতে উৎকোচ নেন এবং চেক বিতরণের সময়ে সরকারি বাজেট থাকা সত্ত্বেও ৩০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রশিক্ষণার্থীরা প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত থাকলেও তাদের হাজিরার টাকাগুলো তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: সদরপুরে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের পূর্ণমিলনী
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সরকারি কোন গাড়ি বরাদ্দ না থাকলেও তিনি বিভিন্ন অফিস পরিদর্শনে অন্য নারী স্টাফকে সাথে নিয়ে ভাড়া করা প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো গ-২৯-৬৮০৬) যোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যান। এছাড়াও প্রায়শই তিনি অফিস শেষ করে বিকালের দিকে গোপালগঞ্জের পার্শ্ববর্তী জেলা নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় ও ঢাকায় ঘন ঘন যাতায়াত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের অর্থ নয়-ছয় করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জাতীয় দৈনিক নয়াদিগন্ত ও দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ হয়েছিলো। এছাড়াও নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য গোপালগঞ্জ জেলায় দুটো শো-রুমের বরাদ্দ থাকলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্বজনপ্রীতি করে নারী উদ্যোক্তাদেরকে উক্ত শো রুম বরাদ্দ না দিয়ে অফিসের ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষককে শো রুম বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বিউটি পার্লারের বরাদ্দের অর্থের হদিসও মিলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মহিলা বিষয়ক দপ্তরের সর্বশেষ নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন পদে বিভিন্ন জনকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মো সাইফুল ইসলামের ব্যবহৃত ০১৭...৬৩৬ নম্বরে কল দিয়ে তার দপ্তরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আগামীকাল আমার অফিসে আসেন, সামনে বসে কথা হবে।
আরও পড়ুন: সোনারগাঁয়ে লোক কারুশিল্প মেলায় শেষ মুহূর্তে দর্শনার্থীর উপচে পরা ভীড়
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত গোপালগঞ্জ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ণভূমি গর্বিত গোপালগঞ্জে একজন অভিজ্ঞ ও সৎ উপ-পরিচালককে দ্রুত পদায়ন করে অত্র দপ্তরের দাপ্তরিক সেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল।
এমএল/