জাবিতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে ৩১০কোটি টাকার টেন্ডার


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫৩ অপরাহ্ন, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


জাবিতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে ৩১০কোটি টাকার টেন্ডার
ফাইল ছবি।

সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মাস্টারপ্ল্যানবিহীন চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আবারও মহাপরিকল্পনা না করেই অবকাঠামো নির্মাণের প্রচেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ও পঠনপাঠনের পরিবেশের ধ্বংস এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে ৩১০ কোটি টাকার টেন্ডার দিয়ে ৩য় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পায়তারা শুরু করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আরও ৩টি অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ এবং ১৫২ কোটি টাকা খরচ করে অপ্রয়োজনীয় ৩য় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পায়তারা শুরু করে ৩১০ কোটি টাকার টেন্ডার দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অপরিকল্পিত অবকাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন হুমকি তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সংকটের সময় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধিরই নামান্তর।


আরও পড়ুন: জাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাস‌নিক ভবন অব‌রোধ


বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী এক যৌথ বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীনভাবে একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ করে জাহাঙ্গীরনগরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে দৃশ্যমান ক্ষতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সকল অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রনয়ণ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য কয়েকবছর যাবত সক্রিয় আন্দোলন করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। কিন্তু প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ও অদক্ষতার কারণে আলোর মুখ দেখতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত মাস্টারপ্ল্যান। একের পর এক বিভাগ, ইন্সটিটিউট (আইবিএ, আইআইটি, চারুকলা) নিজেদের অর্থায়নের কথা বলে মাস্টারপ্ল্যানের অভাবে খেয়ালখুশি মত বৃক্ষ নিধন করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।


তারা আরও বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পেও সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান হয়েছে। উপরুন্ত অপূর্ণাঙ্গ নতুন প্রশাসনিক ভবনটি ৪০ কোটি টাকা খরচ করে পূর্ণাঙ্গ না করে, তথ্য গোপন করে ১৫২ কোটি টাকা খরচ করে ৩য় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পায়তারা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে প্রতিঘন্টায় ৫ হাজার ৬০০ শত জন শিক্ষার্থীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন লেকচার থিয়েটার এবং আলাদা একটি 'পরীক্ষার হল ভবন' নির্মিতব্য থাকার পরও নতুন করে ৩টি অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া 'ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র'র একাধিক তলায় কোনো কার্যক্রম না থাকায়, সেখানে জীববিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের ল্যাব সুবিধা প্রদান করার সুযোগ ও সক্ষমতা রয়েছে।


গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের সিএসসি-পরিবেশ বিজ্ঞান ভবনেও ফাঁকা রয়েছে বিভিন্ন তলায় অনেকগুলো শ্রেণীকক্ষ। গণমানুষের কষ্টার্জিত অর্থের টাকায় নির্মিত একেকটি ভবনকে অবহেলায় ফেলে রেখে নতুন নতুন ভবন নির্মাণের দুরভিসন্ধি সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।


আরও পড়ুন: জাবিতে তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে মৌন প্রতিবাদ


শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির ব্যাপারে তারা বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় না করে, তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে অটোমেশন চালু করলে পরীক্ষার ফরম পূরণ থেকে শুরু করে সনদ উত্তোলনের কাজেও ভোগান্তি লাঘব হবে শিক্ষার্থীদের। সামগ্রিক বিবেচনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রনয়ণ করে সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জোর দেন নেতৃবৃন্দ। 'অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প' পুনর্বিবেচনা করে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ এবং অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণের পায়তারা বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অপ্রয়োজনীয় প্রায় ২৭০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।


উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মতে উপযোগিতাবিহীন ও অপরিকল্পিত একের পর এক ভবন নির্মাণের প্রচেষ্টাকে বড় তহবিল ব্যয় করার জন্য "শপিং লিস্ট উন্নয়ন" বলেও অবিহিত করা হয়েছে।


আরএক্স/