জাবিতে ক্যান্টিন নিয়ে প্রভোস্ট-ছাত্রলীগ দ্বন্দ্ব
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৫৯ অপরাহ্ন, ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আলবেরুনী হলের ক্যান্টিন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান বিরাজ করছে প্রভোস্ট সিকদার মো. জুলকারনাইন ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এর মধ্যেই প্রভোস্টের অনুমতির তোয়াক্কা না করে একজনকে ক্যান্টিন চালানোর অনুমতি দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলবেরুনি হলের ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন মো. রেহান। তবে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও নানা অযুহাতে সে ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যান্টিন মালিকের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকির পরিমাণ অত্যধিক বেশি হওয়ায় ক্যান্টিন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: এক যুগ ধরে অযত্নে ইবির প্রথম শহীদ মিনার
এ ঘটনার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ক্যান্টিন ইজারা না দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি নিয়োগ নিয়ে ছাত্রলীগের সাথে দ্বন্দ্বের মুখে এক সাবেক শিক্ষার্থীকে ক্যান্টিন দিতে চান প্রভোস্ট সিকদার মো. জুলকারনাইন। তবে ছাত্রলীগের সাথে এ ব্যাপারে লিয়াজু না হওয়ায় তাকে ক্যান্টিনের দায়িত্ব দেয়া সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার পর ক্যান্টিনে তালা ঝুলিয়ে দেন প্রভোস্ট।
তবে প্রভোস্টের কাছে অনুমতি বা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই গত বুধবার দুপুরে ইয়াসিন নামের এক ব্যাক্তিকে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় হল ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের দোষাারোপ করেছেন আল বেরুনীর হল প্রভোস্ট। এতে হল ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম, চিন্ময় সরকার ও আনোয়ার হোসেন রকিকে দায়ী করেছেন তিনি। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র বলছে, নতুন ক্যান্টিন পরিচালকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারী দুই ভাগের নেতারা।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টিন বন্ধ। আমরা স্যারের কাছে অনেকবার গিয়েছি-নিলাম হোক, যে সর্বনিম্ন রেট দিবে তাকেই দায়িত্ব দিবে এমন দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। ছেলেরা সবাই বটতলা, দূরে দূরে গিয়ে খেয়ে আসতে হয়। পরে এডমিশনের আগের দিন ৩০/৪০ জন এসে আমাদের কাছে বলে যে, এডমিশনের সময় এত দূর গিয়ে কিভাবে খাবো? পরে আপাতত রান্না করে খাওয়ানোর জন্য আমরা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। পরে বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যে পায় তাকেই দেয়া হবে। কিন্তু প্রভোস্ট ভাবছে পুরো ব্যাপারটা আমিই করাচ্ছি। এখানে আমার কি লাভ?
চিন্ময় সরকার বলেন, প্রভোস্ট স্যার সাত্তার নামে একজনকে দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল। আমরা খুজে দেখলাম যে তার আগের রেকর্ড ভালো না। সে কোন জায়গায় দু’তিন মাসের বেশি সার্ভিস দিতে পারেনি। পরে আমরা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। স্যার আমাদের নামে যেসব কথা বলছেন তা অত্যন্ত দু:খজনক। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা এমন কথাবার্তা কখনোই আশা করিনা।
ক্যান্টিন মালিক ইয়াসিন বলেন, আমাকে প্রভোস্ট স্যার এ দায়িত্ব দেয়নি। বড় ভাইরা আমাকে আপাতত রান্না করে খাওয়াতে বলেছে। তবে টাকা দেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এসব কথা বিরোধী পক্ষের লোকজন ছড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: অবশেষে জাবির সিন্ডিকেট সভায় নিপীড়ক শিক্ষক জনি স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
এ ঘটনায় হল প্রভোস্ট সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, এখানে হল প্রশাসন নিরূপায়। কোন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তারা ক্যান্টিন একজনের হাতে তুলে দিয়েছে। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি এখানে একদমই অসহায়। আমি প্রভোস্ট কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।
এর আগে, আল-বেরুনী হলের পেছনে খেলার মাঠকে ঘিরে প্রভোস্টের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের নেতাকমীর্রা। পরবর্তীতে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এর কিছুদিন পর হলে তিনটি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে আবার স্বার্থগত দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন তারা। ছাত্রলীগের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ না দেয়ায় সাক্ষাৎকারের দিন প্রভোস্টের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করতে বাধ্য হয়। তবে বিভিন্ন সময় হল থেকে টাকা আত্মসাৎ ও ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন যথার্থ নয় বলে অভিযোগ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
আরএক্স/