Logo

মেহেরপুরে প্রতি সাড়ে ৪ ঘন্টায় ১ টি করে বিবাহ বিচ্ছেদ

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
৭ মার্চ, ২০২৪, ০২:৫২
176Shares
মেহেরপুরে প্রতি সাড়ে ৪ ঘন্টায় ১ টি করে বিবাহ বিচ্ছেদ
ছবি: সংগৃহীত

এই জেলাতে তালাক হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ৫ টি করে।

বিজ্ঞাপন

সারাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে। এই হারটা রীতিমতো ভয়াবহ। সারাদেশের মত মেহেরপুরেও বাড়ছে তালাকের হার। 

মেহেরপুরে প্রতি সাড়ে ৪ ঘন্টায় ১টি তালাক হচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই জেলাতে তালাক হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ৫ টি করে।

বিজ্ঞাপন

মেহেরপুর জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী ২০২২ সালে জেলাতে মোট ২১ শত বিবাহের পাশাপাশি ১৯২৯ টি তালাক রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এই চিত্রটিই  উদ্বেগের। 

বিজ্ঞাপন

মেহেরপুর জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় প্রদিত্ত তথ্য মতে, সদর উপজেলায় ৭ জন, মুজিবনগর উপজেলায় ৪ জন এবং গাংনী উপজেলাতে ১১ জন সরকার নিবন্ধিত নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের (কাজী) মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৮০২ টি বিবাহের বিপরীতে ৯৭৪ টি তালাক, মুজিবনগর উপজেলায় ৫৫২ টি বিবাহের বিপরীতে ২৩৩ টি তালাক এবং গাংনী উপজেলায় ৭৪৬ টি বিবাহের বিপরীতে ৭২২ টি তালাক নিবন্ধিত হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ ও এর পরিপেক্ষিতে পরবর্তীতে সংঘটিত তালাকগুলি আইনগত ভাবে লিপিবদ্ধ হয়না। বিষয়গুলি আদালতে গড়ায়। ফলে এই পরিসংখ্যান সঠিক ভাবে উঠে আসে না।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) 'বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২' শীর্ষক জরিপের তথ্য অনুযায়ী মেহেরপুর জেলায় ২২ সালে মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৫৬ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে জেলায় বিবাহের হার ২২ এবং তালাকের হার ২.৭। সে অনুযায়ী ২০২২ সালে মেহেরপুর জেলায় মোট বিবাহের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫ শত ১৫ টি এবং তালাকের সংখ্যা ১৯০৪ টি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল সমাজ মনে করে, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল তৈরি হলে বা বনিবনা না হলে, চট করে একটি বাচ্চা নেওয়া উচিৎ। তাহলে সম্পর্ক টিকে যাবে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তখন সন্তান এই নাটকের অংশ হয়ে যায়, তার জীবন হয়ে যায় বিভীষিকাময়। কারণ, শিশু যদি দেখে বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি, ভুল বোঝাবুঝি, মারামারি বা শীতল সম্পর্ক চলছে, তা সন্তানের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মেহেরপুর পৌর এলাকার একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার খায়রুল ইসলাম(বাশার)। তিনি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৮ টি বিবাহ ও ১০০ টি তালাক রেজিস্ট্রি করেছেন। আর ২৩-২৪ অর্থ বছরে এখন পর্যন্ত ৩৩ টি বিবাহ ও ৮৫ টি তালাক রেজিস্ট্রি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

খাইরুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, ' জেলাতে তালাকের হার পল্লী অঞ্চলে শহরের তুলনায় প্রায় ৮২ শতাংশ বেশি, এটিই উল্লেখযোগ্য তথ্য। শহরের ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের দম্পতিরা বিভিন্ন কারণে যে বিষাক্ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও গ্রামের মানুষ সেটা করছেন না। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান তালাকের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে সংসারের বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে বাবা-মা মেয়ের সংসারে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করতে চান।  ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠছে। যার শেষ পরিণতি বিচ্ছেদে গড়াচ্ছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও উল্লেখযোগ্য একটা ব্যপার হলো বর্তমানে তালাকের কারণ হিসেবে যৌতুক ও শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ তেমন দেখা যাচ্ছে না।'

বিজ্ঞাপন

মেহেরপুর সদর উপজেলার নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুল মাবুদ জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার কাছে ১৪৫ টি বিবাহ ও ২৪৫ টি তালাক রেজিস্ট্রি হয়েছে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত তার মাধ্যমে ১১৩ টি বিবাহ ও ২১৬ টি তালাক রেজিস্ট্রি হয়েছে। 

আব্দুল মাবুদ আরও বলেন, 'বাল্য বিবাহের কারনে তালাক বেশি হচ্ছে। এছাড়াও এ অঞ্চলে তালাকের একটি বড় কারণ হলো স্বামী বিদেশে থাকা। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় প্রবাস থেকে স্বামীর পাঠানো টাকার হিসাব না রাখা, যত্রতত্র খরচ করা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামীর অবর্তমানে পরকীয়া জড়িয়ে পড়া।’

বিজ্ঞাপন

মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা কল্লোল বলেন, ‘যে সকল বিবাহ বিচ্ছেদ আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে সেগুলোর কারণ অনুসন্ধান করলে স্পষ্ট হয় যে সমাজে নৈতিকতার পতন ঘটেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। নারী-পুরুষ বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছে, স্ত্রী স্বামীকে মানতে বা তার অধিনে থাকতে চাইছেন না। মূলত এসকল কারণেই বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে। বর্তমানে নারীরা অতিরিক্ত স্বাধীনতাকামী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা স্বাবলম্বী হতে চায়, এবং স্বাবলম্বী হতে যেয়ে অনেকেই অনৈতিক পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে আবার প্রবাসে থাকা স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্বামীর পাঠানো টাকা তসরুপাত সহ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।’

বিজ্ঞাপন

অপর এক আইনজীবী এডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, ‘মূল কথা হলো, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস হারিয়ে গেলে তা একটি অস্বাস্থ্যকর ও লোক দেখানো সম্পর্কে পরিণত হয়। তখন সন্তান, দায়-দায়িত্ব সব কিছুই ঠুনকো হয়ে পড়ে। সম্পর্কটা হয়ে যায় সাংঘর্ষিক। নানা রকম আলাপ-আলোচনা করেও যখন সমন্বয় করা যায় না, তখন বিয়ে বিচ্ছেদ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।’

বিজ্ঞাপন

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এম এ মুহিত এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাংলাদেশের জলবায়ুর কারণে মেয়েরা অল্প বয়সে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। কুড়িতে বুড়ি, অভাবে স্বভাব নষ্ট ও নিরক্ষতা এই মন্ত্র গুলোকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের সহজ সরল অভিভাকরা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আদালতে গেলে লক্ষ্য করা যায় বিবাহবিচ্ছেদের কারণে গ্রামের মানুষের নারী নির্যাতনের মামলা বেশি।  যৌতুক প্রথা ও বাল্য বিবাহের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা আগে থেকে বৃদ্ধি পেলেও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও অবাধ মেলামেশার সুযোগ পাওয়ার কারণে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। আমরা ছোট থেকে বড় বড় মনিষিদের অনুসরণ করি। বর্তমান প্রজন্মরা অল্প শিক্ষিত ফেসবুক সেলিব্রেটি ও টিকটকারদের অনুসরণ করছে। অনেক গৃহবধুরা ঘরে বসে ফেসবুকে অধিক অয় করার আশায় স্বামীকে উপেক্ষা করে ফেসবুকে রিল বানাতে ব্যস্ত থাকে। এই কারণে অধিকাংশ পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা রোধ করতে হলে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে এবং সেই সাথে অভিভাবক ও শিক্ষকদের অধিক সচেতন হতে হবে। সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে অনলাইন টুলস্ গুলো সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সামাজিক অবক্ষয় অনেকটাই কমে যাবে। সেই সাথে বিবাহবিচ্ছেদের হার কমে যাবে।’

আরএক্স/

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD