চিত্রনায়িকা নিপুণের প্যানেলে ভাঙনের সুর

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে যেনো আলোচনা ও সমালোচনার যেন শেষ নেই। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই শিল্পীদের মাঝে বাড়ছে উত্তেজনা। ইতোমধ্যেই নতুন-পুরোনো অনেক তারকারাই নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের নতুন তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও মিশা সওদাগর থাকবেন একই প্যানেলে। অন্যদিকে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও বরেণ্য অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। একজন রাজনীতিবিদের অনুরোধে গত নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিপুণ শুধু আমাকেই না, আমার ছেলেকেও ম্যানেজ করেছে। তবুও আমি নির্বাচনে দাঁড়াতাম না। আমাদের দেশের বড় মাপের একজন রাজনীতিবিদ অনুরোধ করেছিলেন। কারণ, তার প্রতি আমার বিশেষ একটা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রয়েছে, যার কারণেই আমার এই জায়গায় আসতে হয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন নির্বাচণের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পরই বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার সভাপতির খোঁজে আছেন। সুপারস্টার শাকিব খান থেকে শুরু করে প্রস্তাব দিয়েছেন অনন্ত জলিলকেও। কিন্তু সবাই তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত তিনি তার প্যানেলে সভাপতি পাননি তবে বার বারই বলছেন এবারের নির্বাচনে চমক নিয়ে আসছেন তিনি।

এদিকে নিপুণের প্যানেলে ইতোমধ্যে ভাঙন দেখা যাচ্ছে। গেলবার যাদের সাথে নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন তাদের অনেকেই এবার নিপুণকে ত্যাগ করছেন। এদের মধ্যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না আবার কেউবা মিশা-ডিপজল প্যানেলে নাম লিখিয়েছেন ইতোমধ্যে। যাদের মধ্যে আছেন জানা গেছে গতবার কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করেছেন নায়িকা শাহনূর। তবে এবার তিনি নাম লিখিয়েছেন অন্য প্যানেলে। কারণ হিসেবে এই অভিনেত্রী বলেন, কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক কিছুই তারা তাদের একক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করেছেন। কাউকে জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন মনে করেননি। একজনের সিদ্ধান্তই কমিটিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল।

আরও পড়ুন: নিপুণের জন্য বড় নেতার অনুরোধে শিল্পী সমিতির নির্বাচন করেন ইলিয়াস কাঞ্চন

শাহনূর আরও যোগ করেন, আমি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও দুই বছর মিটিং ছাড়া আমাকে ডাকেনি এবং কোনো কিছুতেই রাখেননি। সবকিছু থেকেই আমাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। শিল্পী সমাজের প্রাপ্য সম্মান চাই। গত দুই বছরে আমরা শিল্পীরা, যে সম্মান হারিয়েছি তা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে চাই। যে কারণে এই প্যানেলে আসা। ওই কমিটিতে থেকে দুই বছর তেমন কোনো কিছুই করতে পারিনি। এই কমিটিতে থেকে একসাথে সবাই মিলে মিশে কাজ করব।

এদিকে কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে কার্যকরী পরিষদে ছিলেন অভিনেতা নানা শাহ। তিনিও এবার নাম লিখিয়েছেন মিশা-ডিপজলের প্যানেলে। অনেক আক্ষেপ নিয়েই এই অভিনেতা বলেন, আগেরবার আমি ও ডি এ তায়েব নিপুণের সাথে নির্বাচন করেছিলাম। ভালো কিছু কাজের আশা করেই তাদের সাথে নির্বাচন করেছিলাম। তারা কথাও দিয়েছিল ভালো সিনেমা নির্মাণ করবে। তবে একটি কথা মনে রাখবেন শিল্পী সমিতি কিন্তু ছবি নির্মাণ করতে পারে না। কিন্তু নায়িকা নিপুণ কথা দিয়েছিল ৬টি সিনেমা নির্মাণ করবে। আমি তারই কথা অনুযায়ী সামনে এগিয়ে ছিলাম। দুটি ছবিতে এন্টি করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার পাশে কেউই আসেনি। আমরা শিল্পীরা সম্মান আর ভালোবাসা চাই। এটা যখন আমরা হারিয়ে ফেলি তখন অনেক কষ্ট পাই। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমাদের অনেক শিল্পীই এখন বেকার আছেন। তাদের জন্য শিল্পী সমিতি দুই বছর কি এমন করতে পেরেছে? দুই বছরে শিল্পী সমিতির কোনো সফলতা দেখছি না।

দুই বছরে কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের কাজের তেমন সফলতা না দেখলেও অদ্ভুত ধরণের সফলতা দেখেছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের টেলিভিশনের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ভারতে পুরস্কার পেয়েছে সেটি নাকি শিল্পী সমিতির আবেদন। এখানে শিল্পী সমিতির কী আছে? এটি তো সে তার কর্মের গুণে পেয়েছে। হ্যা আমাদের কাজ করতে হবে, এরকম অদ্ভুত কথা বলে কোনো লাভ নেই। ওই কমিটিতে আমরা গিয়ে অনেক ভুল করেছি। তাই এবার পূর্বেই ঠিক করেছি মিশা-ডিপজল প্যানেলে যোগ দিব। যারা কোনো কাজ করতে পারবে তারাই এই প্যানেলে আছে।

এদিকে কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন নায়ক ডি এ তায়েব। তিনিও বেশ সাবেক প্যানেলের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়েই এবার মিশা-ডিপজল পরিষদ থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

আরও পড়ুন: দেশে ফিরেই নিপুণের প্যানেলে সভাপতি হওয়ার গুঞ্জন আহমেদ শরীফের

কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচন করে ভোটে পরাজিত হলেও কো-অপ্টের মাধ্যমে কমিটিতে জায়গা পান অভিনেতা সীমান্ত আহমেদ। তবে নিজের প্যানেলের সভাপতির ওপর অনেকটাই বিরক্ত তিনি। জানান, ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্য দুই বছর ধরে কাজ করতে পারেননি তারা।

সীমান্ত জানান, সভাপতির অনুমতি ছাড়া তো কোনো কিছু করা সম্ভব নই। আমরা কমিটিতে আসার পর সেভাবে আসলে কোনো কিছুই করা হয়নি, আর করতেও পারিনি। যখন শিল্পীরা বলেন তোমাদের অনেক আশা নিয়েই ভোট দিয়েছি, তখন তাদেরকে কিছু বলতে পারি না। শিল্পীদের জন্য কিছু করতে না পারায় তাদেরকেও মুখ দেখাতে পারি না।

নিপুণের প্যানেলের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন অভিনেতা সাইমন সাদিক। তিনি সহ-সাধারণ সম্পাদকের পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে জয়ী হন। তিনি সম্প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। এদিকে তিনি আর নির্বাচন করছেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। তবে কেন নির্বাচন করবেন না তা পরিষ্কার করেননি এই অভিনেতা। জানা যায় অনেকটা ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাইমন।

এদিকে নিপুণের প্যানেলের দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক অভিনেতা আরমান গত নির্বাচনে নিপুণের হয়ে কাজ করেছেন। এবার তিনি ডিপজল-মিশা প্যানেলের সাথে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক নায়ক ইমনও নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছেন বলে খবর শোনা যাচ্ছে।

নিপুণের প্যানেল থেকে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। সদ্য নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচণে অংশ নিবেন না। নিপুণ তাকে সভাপতি পদে নির্বাচনের অনুরোধ করলে তিনিও সাদরে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এমএল/