শ্রীনগরে বৈশাখী মেলা-উৎসবকে সামনে রেখে বেড়েছে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:১২ অপরাহ্ন, ১লা এপ্রিল ২০২৪


শ্রীনগরে বৈশাখী মেলা-উৎসবকে সামনে রেখে বেড়েছে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা
ছবি: প্রতিনিধি

শ্রীনগরে আসন্ন বৈশাখীর মেলা ও উৎসবকে সামনে রেখে মৃৎ শিল্পীরা মাটি সামগ্রী তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। স্থানীয় পাল বাড়িতে এখন চলছে হাতি, ঘোড়া, গরু, খরগোস, টিয়া, কবুতর, পুতুল, হাড়ি-পাতিলসহ সাংসারিক কাজে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ধরেণের মাটির উপকরণ। তবে বৈশাখী মেলায় মাটির ব্যাংকসহ শিশুদের খেলানা সামগ্রীর কদর বেশী থাকায় এগুলো বেশী তৈরি করছেন তারা। কুমার পরিবারের নারী ও পুরুষ সদস্যরা মিলে মাটির এসব জিনিসপত্র তৈরি করে দিন পাড় করছেন। 


সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের পাল বাড়িতে বৈশাখের মেলা ঘিরে হরেক রকমের মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করা হচ্ছে। হাতে তৈরী এসব কাঁচা মাটির জিনিসপত্র রোদে শুকানো হচ্ছে। পরে আগুনে পুড়িয়ে রং করা হচ্ছে। তন্তর পাল বাড়িতে ৪টি পরিবারের বসবাস। 


এখানকার নারী-পুরুষ সবাই মাটির জিনিসপত্র তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। মৃৎ শিল্পীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় মাটির এককেটি বস্তু তার চিরচেনা রূপ পাচ্ছে। রং-তুলির আচরে এসব সামগ্রী যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে।


সমীর পাল বলেন, মাটির খেলানাসহ হাড়ি-পাতিল তৈরি করেন। আসছে বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: শ্রীনগরে আলু উত্তোলনে শ্রমিক সংকটে খরচ বাড়ছে কৃষকের


৫ কন্যা সন্তানের জনক সমীর পাল বলেন, এ পেশায় টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। অন্য কোন আয় রুজীর পথ নেই তার। বিভিন্ন মেলা-উৎসব-অনুষ্ঠানে বিক্রির জন্য মাটির খেলনা তৈরি করেন। এর পাশাপাশি এসব মাটির জিনিসপত্র পাইকারীভাবে বিক্রি করেন। পাইকাররা বাড়িতে এসে এগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে মেলায় বিক্রি করেন। 


সমু পাল ও শোভা রানী দম্পতি জানান, আগের মত মাটির হাড়ি পাতিলের কদর নেই। এখন বিভিন্ন মেলায় বিক্রির জন্য মাটির খেলনা সামগ্রী তৈরি করে থাকেন তারা। ৪ কন্যা সন্তান ছাড়া কোন পুত্র সন্তান নেই তাদের। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় পূর্ব-পুরুষদের পেশাটি এখনও ধরে রাখার চেষ্টা করছেন জানান তারা।


ষোলঘরের শ্রী যতন পাল জানান, প্লাষ্টিক ও মেলামাইনের যুগে মাটির জিনিসপত্র বিলিন হতে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এদিকে সরকারের সুদৃষ্টি না থাকলে মৃৎ শিল্পটি একেবারেই হাড়িয়ে যাবে।


আরও পড়ুন: শ্রীনগরে কম খরচে ভুট্টা চাষে লাভ বেশী, সাইলেজের কদর বাড়ছে


হাঁসাড়ার অরুন পাল, মদন পাল, লক্ষণ পাল, সুরন্ড পাল জানান, পূর্ব পুরুষদের সবাই এই পেশায় কাজ করে গেছেন। তারাও নানা প্রতিকূলতার মাঝেও তাদের ৪৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হাঁসাড়া, ষোলঘর, বাঘড়া, শ্রীনগর সদর এলাকার হরপাড়া, শ্রীনগর বাজার সংলগ্ন পালবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক কুমার পরিবার এখনও মৃৎশিল্পটি ধরে রেখেছেন।পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ পূজার প্রতীমা ও মিষ্টির হাড়ি, দইয়ের খোড়াসহ সাংসারিক কাজকর্মে ব্যবহারযোগ্য নানান ধরণের মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিকিকিনির মধ্যে জীবিকা নির্বাহ করছেন।


জেবি/এসবি