জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট: শেখ হাসিনা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০২ অপরাহ্ন, ৮ই মে ২০২৪


জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট: শেখ হাসিনা
ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি।


বুধবার (৮ মে) সংসদে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালামের লিখিত প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।


শেখ হানিনা বলেন, বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে এ সংকট ঘনীভূত হওয়ার বেশ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।


আরও পড়ুন: সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র কিনেছে বহুজাতিক ৭ কোম্পানি


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে ওএমএস খাতে ৪ লাখ টন চালের সংস্থান রয়েছে। চাল ও আটার বাজারদর সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বর্তমানে ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে সর্বমোট ৮৭১টি কেন্দ্রে দৈনিক মোট ৮৬৯ টন চাল এবং ১ হাজার ১০১ টন করে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ওএমএস (সাধারণ) খাতে প্রায় ১.৬৭ লাখ টন চাল এবং ২.১৩ লাখ টন আটা বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে ১ কোটি পরিবারের মধ্যে ৫ কেজি করে প্রতি মাসে মোট ৫০ হাজার টন চাল বিতরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় চালের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে ২ কেজি করে ডাল ও ২ কেজি করে সয়াবিন তেলও বিতরণ করা হচ্ছে।


তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে কর্মাভাবকালীন ৫ মাস (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল) ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করে নিয়মিত খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরগুলোতে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএস চাল বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশে অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণ প্রক্রিয়া চলমান রাখা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে খাদ্য শস্য সংগ্রহের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২.১৯ লাখ টন। এ ছাড়াও চলতি অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কৃষি খাতে প্রদত্ত ভর্তুকি ও প্রণোদনা কৃষকের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পরোক্ষভাবে কৃষিজাত পণ্যের মূল্য নিম্নমুখী রাখতে কার্যকরী হয়েছে। ডাল, তেল, মসলা, ভুট্টাসহ ২৪টি ফসল উৎপাদনের জন্য সুদ ভর্তুকির আওতায় বিদ্যমান ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ কৃষিঋণ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


তিনি আরও বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ২৯ শতাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজারদর স্থিতিশীল রাখা ও অবৈধ মজুতদারি কঠোরভাবে দমনের জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতি (রেপো) সুদহার দফায় দফায় বাড়িয়ে মে ২০২২ এর ৪.৭৫ শতাংশ থেকে সর্বশেষ ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফেসিলিটি (এসডিএফ বা রিভার্স রেপো রেট) বৃদ্ধি করে ৬.৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। নীতি সুদহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করায় বাজারভিত্তিক গড় সুদ হারে দৃশ্যমান ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তন এসেছে।


আরও পড়ুন: হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


শেখ হাসিনা বলেন, টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে শিগগিরই ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।


মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত হলে এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ার আশঙ্কা করে তিনি বলেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে। তবে সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সূত্রে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্যের সাপ্লাই-চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রফতানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বাড়তে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে রফতানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে।


আরও পড়ুন: প্রকল্প গ্রহণের আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ


মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেই যেন মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় কার্য নির্ধারণ করে। সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছি।


এ সময় তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো ধরনের সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ্বালানি তেলের বাজারকে বেশ প্রভাবিত করে। এতে করে পণ্যের জাহাজ ভাড়া বাড়ে। যা আমদানি ব্যয়ের উপর একটা চাপ সৃষ্টি করে। সার আমদানি ব্যয়েও প্রভাব পড়ে। এতে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনেশিয়া, কানাডা, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের সাথে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও বেশি জোরদার করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট আরও ঘনীভূত ও দীর্ঘায়িত হলে তা বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতিক একটা প্রভাব ফেলতে পারে বিধায় সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


এমএল/