কী কারণে ঈমান বাড়ে বা কমে?


Janobani

ইসলাম ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭:২৪ অপরাহ্ন, ১৫ই মে ২০২৪


কী কারণে ঈমান বাড়ে বা কমে?
ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মে ঈমানের গুরুত্ব ব্যাপক। মূলত ঈমান শব্দের অর্থ হলো অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা। ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি, কিয়ামতের দিনের প্রতি; তাকদিরের প্রতি, ভাগ্যের ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে; মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি। ' (শুআবুল ইমান)।


কোনো বিষয় শুনে কোনো কিছু বিশ্বাস করা, আর নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করা- দুটি সম্পূর্ণ আলাদা কথা। একইভাবে একজনের দেওয়া সংবাদ বিশ্বাস করা আর দু’জনের সংবাদ বিশ্বাস করা এক কথা নয়।  


হযরত ইবরাহিম (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখান আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করো না? হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, বিশ্বাস তো অবশ্যই করি; কিন্তু আমার অন্তর যাতে পরিতৃপ্ত হয় এ জন্য আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই। ’ -সূরা বাকারা: ২৬০


কাজেই অন্তরের বিশ্বাস এবং তার স্থিরতা ও প্রশান্তির দিক থেকে ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ।


আরও পড়ুন: অসুস্থ প্রাণী জবাই করে খাওয়া হালাল না হারাম?


আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে ভাল কাজের মাধ্যমে বান্দার ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজের মাধ্যমে ঈমান কমে যায়। এব্যাপারে কুরআন ও সহীহ হাদিসে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। যেহেতু উপরোক্ত বিষয়সমূহের সমষ্টির নাম ঈমান, সে হিসেবে ইমান বাড়বে ও কমবে এটিই স্বাভাবিক।


কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে এটা বুঝা যায়, মানুষের ইমান বাড়ে এবং কমে। এ বিষয়ে কি বলছেন আলেমগণ চলুন জেনে নেওয়া যাক-


যেভাবে ঈমান বাড়বে-


প্রথম উপায়: আল্লাহর সমস্ত নাম ও গুণাবলীসহ আল্লাহতায়ালার পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়ের জ্ঞান যতো বৃদ্ধি পাবে, নিঃসন্দেহে তার ইমান শক্তিও ততো বৃদ্ধি পাবে। যে সব আলেম বর্ণিত বিষয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন তারা এ সম্পর্কে জ্ঞানহীন আলেমদের চেয়ে ইমানের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী।


দ্বিতীয় উপায়: আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে গবেষণা করা এবং মানব জাতিকে যে জীবন বিধান দিয়েছেন, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টিরাজি নিয়ে যতো চিন্তা করবে, ততোই তার ইমান বাড়বে।  


এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও। তোমরা কি অনুধাবন করবে না?’ -সূরা যারিয়াত: ২০


তৃতীয় উপায়: বেশি করে সৎ কাজ সম্পাদন করা। সৎ আমল বেশি বেশি সম্পাদনের কারণে ইমান বৃদ্ধি পায়। এমন সৎ আমল মুখের মাধ্যমে হোক, কিংবা কাজের মাধ্যমে হোক।  


আরও পড়ুন: চাটুকারিতা নিয়ে যা বলছে ইসলাম


ঈমান কমে যাওয়ার কিছু কারণ-

১। মহান আল্লাহর গুনবাচক নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা থাকা ঈমান কমে যাওয়ার বিশেষ কারণ। কেননা আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই কমবে, ঈমানও তত কমতে থাকবে।


২। সৃষ্টিতে ও শরীয়তে আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে গবেষণা করা থেকে দূরে থাকা। কেননা আল্লাহর সৃষ্টিতে চিন্তা-ভাবনা না করা ঈমানের ঘাটতি হওয়ার অন্যতম কারণ।


৩। সৎ আমল না করা ঈমান কমে পাওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু যদি বিনা কারণে কোনো ওয়াজিব কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে ঈমান কমার সাথে সাথে সে শাস্তির মুখোমুখি হবে।


৪। পাপের কাজে লিপ্ত হওয়া। কেননা পাপ কাজ করলে অন্তরে এবং ঈমানের উপর মারাত্নক প্রভাব পড়ে। এই জন্যই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ব্যভিচারী ঈমান থাকা অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।’


এসব থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায় : ঈমান কমে যাওয়া থেকে অনেক পন্থায় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তার মধ্যে কয়েকটি উপায় হলো-


১. ওয়াস্‌ওয়াসার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদেশ মোতাবেক শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে এবং আল্লাহর নিকট শয়তানের প্ররোচনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।


২. বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণে বিভিন্ন জিকিরে মগ্ন থাকতে হবে। কেউ দুনিয়াবি কাজে লিপ্ত হলে সেই কাজ সওয়াবের নিয়তে আত্মতৃপ্তির সঙ্গে করবে। এটাও আল্লাহর স্মরণেরই অংশ।


৩. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অধিক হারে এবাদতে লিপ্ত থাকবে। যখনই বান্দা পরিপূর্ণরূপে এবাদতে মশগুল থাকবে, ইনশাআল্লাহ এ ধরনের কুচিন্তা দূর হয়ে যাবে।


জেবি/আজুবা