নির্বাচনী প্রচারণায় প্রকাশ্যে এমপি কন্যা, সুষ্ঠু নির্বাচন হুমকিতে!
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:১৫ অপরাহ্ন, ১৮ই মে ২০২৪
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন এমপিরা। এমনটাই দাবী বরগুনার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থীদের। এবারের অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একইভাবে যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মন্ত্রী ও এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করার নির্দেশনার পাশাপাশি তাদের আত্মীয়দের প্রার্থী না করতেও বলা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে এবার প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন বরগুনা ২ আসনের সংসদ সদস্যের কন্যা ফারজানা সবুর রুমকি। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য হবে কিনা সেটি এখনও খোলশা হয়নি। তবে অন্য প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচন হুমকির মুখে পরবে বলে দাবী করছেন।
বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় ২য়, ৩য় ও ৪র্থ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা বরগুনা-১ আসনে এবং পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী বরগুনা-২ আসনে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে স্বতন্ত্র ও বরগুনা-২ আসনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। দুইজন সংসদ সদস্যই নতুন। তাই স্থানীয় দলীয় রাজনীতিতে মেরুকরণ রূপ নিচ্ছে ভিন্নতায়।
বরগুনা-২ আসনের আওতায় বামনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যের বড় কন্যা ফারজানা সবুর রুমকিকে গত ১৭ মে চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গেছে। এমন কিছু ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে। মুহাম্মাদ রিমন একটি আইডি থেকে ছবিগুলো পোষ্ট করে “রুমকি আপার মার্কা আনারস মার্কা-মিজান মামার মার্কা (আনারস প্রতীক), আজকে থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু-আল্লাহ ভরসা” ক্যাপশন লিখে পোষ্ট করা হয়। এছাড়া আরও অনেকগুলো আইডি থেকে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশনে ছবিগুলো পোষ্ট করা হয়। ছবিগুলো প্রকাশের পর এলাকায় চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
আরও পড়ুন: কুয়াকাটায় ভাসমান যৌনকর্মীদের উৎপাতে অতিষ্ট পর্যটকরা
এদিকে ১৭ মে বামনা উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন এমপি কন্যা রুমকি। এই শিক্ষকরাই নির্বাচনের নানা দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে একজন প্রার্থী পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক এই বিষয় নিয়েও অভিযোগ তুলছে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা।
অপর দিকে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ২০ ফেব্রুয়ারী লিখিতভাবে সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা জানান, তার অনুপস্থিতিতে তার কন্যা ফারজানা সবুর রুমকিকে পাথরঘাটা উপজেলার প্রতিনিধিত্ব করবেন। আলোচনা আসছে সেই লিখিত চিঠির কথাও। যেহেতু দল থেকে মন্ত্রী, এমপিরা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলা হয়েছে। সেখানে এমপির ছেলে বা মেয়ে হস্তক্ষেপ করাটা কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নও তুলছেন এলাকাবাসী।
কথা হয় বামনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান এর সঙ্গে। তার দাবী দল থেকে মন্ত্রী, এমপিরা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এমপির ছেলে বা মেয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না এমন কথা দল থেকে বলা হয়নি।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত লাগসই প্রযুক্তির প্রদর্শনী
অপর দিকে ওই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আরেক প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে যারা নির্বাচনে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং সহ অন্যান্য দায়িত্বে থাকবে তাদের নিয়ে বৈঠক করা সুষ্ঠু নির্বাচনকে হুমকি মুখে ফেলবে। এমপি মহোদয়ের কন্যা একজন প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় নেমেছে। নির্বাচনী পরিবেশ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমি আশঙ্কায় রয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি এখন পর্যন্ত (বক্তব্য দেয়া পর্যন্ত) কোন ব্যবস্থা নেননি।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতাকারী আরেক প্রার্থী সৈয়দ মানজুরুর রব মার্তুজা আহসান বলেন, এমপির কন্যা একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়া এবং নির্বাচনের পূর্বে সম্ভাব্য প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং সহ অন্যান্য দায়িত্বে থাকবে তাদের নিয়ে বৈঠক করা নির্বাচনকে হুমকিতে ফেলা ছাড়া কিছুই না। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমপি বা তার পরিবারের অন্য কেউ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করুক সেটাই আমাদের দাবী।
ফারজানা সবুর রুমকি'র মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
আরও পড়ুন: বাউফলে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউই পাস করেনি
এ বিষয় জানতে বামনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা ও বরিশালের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদারের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
বরগুনা-২ আসনের সাংসদ সুলতানা নাদিরা (এমপি) ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও তিনি বলেন, সেটা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমি নির্বাচনী কোন বিষয় হস্তক্ষেপ করতে পারব না। আমি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই চলছি।
এমএল/