প্রেমের টানে জার্মানি থেকে বিহারের ছোট গ্রামে এসে বিয়ে করলেন তরুণী
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রেম এমন একটি জিনিস যা কোনো বাধাই মানে না। পাশাপাশি দুটি মনের মিলন এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। তারপর এই মনের মানুষকে বিয়ে করার মাধ্যমে জীবন সঙ্গীনি হিসেবে কাছে পেতে চান সকলেই। সম্প্রতি ভারতের বিহারে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা কার্যত হারিয়ে দিয়েছে গল্পের প্লটকে ও।
প্রেমের টানে সুদূর জার্মানি থেকে ভারতের বিহারে পৌঁছে গিয়েছিলেন এ তরুণী। পাশাপাশি বিহারের এক যুবককে বিয়ে করে তারা তৈরি করলেন প্রেমের এক অনন্য উপাখ্যান। বিহাররাজ্যের নওয়াদা জেলার নারহাট ব্লকের অধীনে বেরোটা নামে একটি ছোট গ্রাম রয়েছে। যেখানে সত্যেন্দ্র কুমার তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকেন। সম্প্রতি এই গ্রামে একটি অন্যন্য বিয়ের সাক্ষী হয়েছে। যেখানে সেই গ্রামের যুবক এক জার্মান কন্যার সিঁথি রাঙিয়ে দিয়ে তাঁকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন। জার্মানিতে বসবাসকারী লরিসা বেলগে এবং সত্যেন্দ্র কুমার একে অপরকে ভালোবাসতেন এবং দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। তাই এই দম্পতি হিন্দু আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথমে ২০১৯ সালে সত্যেন্দ্র এবং লরিসার প্রথম দেখা হয়েছিল সুইডেনে। সেখানে তাঁরা দু"জনেই ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার কাজ করছিলেন। সেই সময় থেকেই দুই দুজন একে অপরের ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। যা অচিরেই প্রেমে রুপান্তরিত হয়। এভাবে দীর্ঘদিন প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার পর সত্যেন্দ্র ও লরিসা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিয়ের পরিকল্পনার কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। কারণ লরিসার ভারতে আসার জন্য ভিসা প্রয়োজন ছিল। এদিকে করোনার কারণে সেই ভিসা পেতেই সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। এমতাবস্থায় সত্যেন্দ্র এবং লরিসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যাতে তাঁরা ধুমধাম করে বিয়ে করে পারেন। যদিও কিছুদিন পরেই, লরিসা একটি বিশেষ ভিসা পাওয়ার সাথে সাথে ভারতে এসে হিন্দু রীতি অনুসারে সত্যেন্দ্রকে বিয়ে করেন। তবে লরিসার বাবা মা ভিসা পেতে পারেননি। যার কারণে তাঁরা অংশ নিতে পারেননি এই বিবাহের অনুষ্ঠানে। লরিসা হিন্দি বলতে এবং বুঝতে পারেন না। কিন্তু তবুও তিনি ভারতীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন।
এদিকে সত্যেন্দ্রের বাবা মা এবং পরিবার ও লরিসাকে ভারতীয় বধূর মতো সাজাতে কোনো অপূরণ রাখেননি। লরিসার হিন্দু আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও তিনি বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন। সত্যেন্দ্র কুমারের পরিবার লরিসার জন্য মেয়ের পক্ষের সমস্ত আচার অনুষ্ঠান সম্পাদন করে। যার মধ্যে গায়ে হলুদ, মেহেন্দির পাশাপাশি স্নান এবং বর পূর্জার মতো আচার ও অন্তভূর্ক্ত ছিল। তারপর লরিসাকে একটি লেহেঙ্গা পরিয়ে ভারতীয় বধূর মতো সাজানো হয়। সত্যেন্দ্র কুমার এবং লরিসার বিয়েতে পুরো বেরোটা গ্রামের মানুষ জড়িত ছিলেন। বিয়েটি নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে।
লরিসা ভারতীয় রীতিনীতিকে খুব ভালোবাসেন। পাশাপাশি তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে খুব বেশি সংযুক্ত। তাই তিনি ভারতীয় রীতিনীতি অনুযায়ী সত্যেন্দ্রকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও ভারত ও জার্মানির সংস্কৃতি একে অপরের থেকে সম্পূর্ন আলাদা। একই সাথে সত্যেন্দ্রের বাবা মা এবং পরিবারের সদস্যরা এই বিয়েতে খুব খুশি। এই অনন্য বিয়ের প্রসঙ্গ সামনে আসতেই সকলেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এই নবদম্পতিকে।
এসএ/