ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’দেখতে সৈকতে পর্যটকের ভিড়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২০ অপরাহ্ন, ২৬শে মে ২০২৪
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’র প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর মধ্যেও পর্যটকরা ঘূর্ণিঝড় রেমালের অবস্থা দেখতে সৈকতে ভিড় করেছে। কলাতলী, লাবনী ও সুগন্ধা পয়েন্টে সকাল থেকে পর্যটকসহ স্থানীয়দের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার (২৬ মে) দুপুর থেকে উপকূলে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি কখনো বা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে রয়েছে দমকা বাতাস। কিন্তু সমুদ্রের স্বরুপ দেখতে সৈকতে বেশকিছু পর্যটক অবস্থান করছে। যদিও ট্যুরিস্ট পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।
এদিক, বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাগর উত্তাল রয়েছে। শনিবার (২৫ মে) রাত থেকে সতর্কবার্তা প্রচার চলমান রেখেছে জেলা প্রশাসনসহ সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। তবে প্রচারণা চালালেও গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপস্থিতি নজরে পড়েনি।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বর্তমানে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ইতোমধ্যে ৯ নম্বর মাহবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। রেমালের কারণে উত্তাল রয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৬ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদ সংকেত দেখাতে বলায় সমুদ্রের বালিয়াড়িতে টানানো হয়েছে লাল পতাকা। আর এ দৃশ্য দেখতে সকালে সাগরপাড়ে ভিড় করেছে পর্যটকরা।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। তাই সাগর উত্তাল রয়েছে। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। লাল পতাকা মানেই সতর্ক করা, যাতে কেউ সমুদ্রস্নানে না নামে। আমরা কাউকে সৈকতে সমুদ্রস্নানে নামতে দিচ্ছি না।
আরও পড়ুন: সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল
এদিকে, সৈকতের জোয়ারের পানি ডুকে পড়েছে কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায়। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও শুটকি মহাল। সমিতি পাড়া বাজার থেকে কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া, মোস্তাক পাড়া, বাসিন্না পাড়ার নিচু অংশ প্লাবিত হয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছে লোকজন। ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে কক্সবাজারে। যার কারণে লোকালয়ে চলে আসছে জোয়ারের পানি।
রবিবার (২৬ মে) দুপরের পর থেকে সমিতি পাড়ায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা ওই এলাকায় মাইকিং চালিয়ে সতর্ক করছেন এবং লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ করছেন।
সমিতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ হোসেন বলেন, বেলা ১২ টার পর হঠাৎ জোয়ারের পানি ডুকে পড়ে লোকালয়ে। জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। পরিবার নিয়ে শহরতলীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি আমরা।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি
কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা করিম মিয়া বলছেন, জোয়ারের পানিতে প্রায় সময় এ অঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে এবার সাগরের পানি বেড়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে শুঁটকি মহালের জিনিসপত্র গোছানোর কর্ম ব্যস্ততা বেড়েছে কর্মচারীদের।
কক্সবাজার পৌর কাউন্সিলর আক্তার কামাল জানান, সমিতিপাড়ার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় সিপিপির ৮৬০০ এবং রেডক্রিসেন্টের ২২০০ সহ ১০ হাজার ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৬৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।”
জেবি/এসবি