চেয়েছিলেন হাল ধরতে, এখন পরিবারের বোঝা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৪২ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৪
হাফিজুল ইসলাম শুভ (২১)। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা হলেও দুচোখ জুড়ে রঙ্গিন স্বপ্ন ছিলো। তবে সব স্বপ্নের ছন্দপতন ঘটেছে এক নিমিষেই। মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয়েছে একটি পা। ফলে যেই শুভ চেয়েছিলো অসহায় পরিবারের হাল ধরতে, সে এখন পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে আছে।
হাফিজুল ইসলাম শুভ’র বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের চেকরমারি এলাকায়। সেখানকার শহিদুল ইসলাম ও হালিমা খাতুন দম্পতির ছেলে তিনি। পরিবারে তার স্কুল পড়ুয়া বোনও রয়েছে।
যে বয়স উপভোগের, নিজেকে গড়ার- সেই বয়সে চুপষে পড়েছেন শুভ। রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালেও। প্রায় এক বছর ধরে পঙ্গু পরিচয়ে ঘরবন্দি তিনি। ছেলের চিকিৎসায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব পরিবার। তারপরও অপ্রত্যাশিত এ জীবন মেনে নিয়েছেন শুভ। সাহস হারাননি এখনো, স্বপ্ন দেখেছেন ঘুরে দাঁড়াবার। তার ধারণা-একটি কৃত্রিম পা হলেই সংসারে সহায় হতে পারবেন তিনি। এজন্য পাশে চান কোন সহৃদয়বান ব্যক্তির।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে তুলে নিয়ে যাওয়া যুবককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির
জানা গেছে, ২০১৯ সালে স্থানীয় বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করেন হাফিজুল ইসলাম শুভ। দরিদ্র পরিবারের সহায় হতে পড়ালেখা ছেড়ে ট্রাক চালকের সহযোগি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। রপ্ত করেছিলেন ট্রাক চালানোর কৌশলও। তবে এ পেশায় তার আর এগোনো হয়নি, এই পেশা তার জীবনে ধরা দেয় কালো মেঘ হয়ে।
শুভ জানান, ঘটনাটি ২০২৩ সালের ২৬ আগষ্টের। সেদিন সিমেন্ট ভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢাকা থেকে আসছিলেন নিজ জেলায়। দিনাজপুরেরর ঘোড়াঘাট এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকের ত্রুটি দেখা দেয়। সড়কের পাশে ট্রাকটি দাঁড় করিয়ে যন্ত্রাংশ হাতে নিয়ে শুভ ট্রাকের নিচে শুয়ে পড়েন। ত্রুটি শনাক্ত করে সমাধানের চেষ্টা করছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই ঘটে বিপত্তি। পিছন থেকে অপর একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় শুভ’র ডান পা। সেখান থেকে শুভকে প্রথমে রংপুরে এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলেও স্বাভাবিক জীবন নিয়ে ফিরতে পারেননি তিনি। ডান পা পুরোটাই কেটে ফেলতে হয় তার।
তিনি বলেন, আমার নিয়তি মেনে নিয়েছি। কিন্তু ঘরবন্দি জীবন আর ভালো লাগেনা, অসুস্থ বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। আমার আত্মবিশ্বাস আছে-একটি কৃত্রিম পা হলে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে চলতে পারবো, কিছু একটা করতে পারবো। কিন্তু আমার পরিবারের পক্ষে এটা আর সম্ভব নয়। এ অবস্থায় কেউ যদি আমার পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো-আমার বিশ্বাস। আমি ভিক্ষাবৃত্তি করে বাঁচতে চাইনা, কিছু একটা করতে চাই। এজন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।
আরও পড়ুন: বাংলাবান্ধায় পুলিশ পরিচয়ে যুবক অপহরণ
শুভ’র মা হালিমা খাতুন বলেন, ইচ্ছা ছিলো একমাত্র ছেলেকে পড়ালেখা শিখিয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছাবো। কিন্তু অভাব আমাদের সে সুযোগ দেয়নি। অভাবের তারনায় ছেলে ট্রাকের হেল্পারি করতে গিয়ে পঙ্গু হয়ে ফিরে এসেছে। তার বয়সি ছেলেরা সুন্দর জীবন নিয়ে চলাফেরা করলেও সে ঘরবন্দি। একটা কৃত্রিম পা হলে আমার ছেলেটাও একটু আধটু চলা ফেরা করতে পারতো। কোন ব্যক্তি বা সংস্থা পাশে দাঁড়ালে আমার ছেলে হয়তো আবার বাহিরের আলো বাতাস দেখতে পারবে।
শুভ’র বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ছেলের চিকিৎসার পিছনে সব শেষ করেছি। সহায়-সম্বল সব শেষ করে, মানুষের কাছে হাত পেতে যোগাড় করে প্রায় ৭ লাখ টাকা ফুরিয়েছি চিকিৎসায়। এখন শেষ সম্বল ভিটেমাটিটাই। আমি নিজেও স্ট্রোকের রোগি, জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই। কাজ করতে পারিনা। পুরো পরিবার খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করছি। ছেলেটার ভাগ্যে হয়তো এটাই ছিলো, এখন এই পঙ্গু ছেলেটার একটা কৃত্রিম পা আর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
এমএল/