সংসদ সদস্য আনার হত্যা
আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে শিমুল-তানভীর-শিলাস্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫১ অপরাহ্ন, ৩১শে মে ২০২৪

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (৩১ মে) আট দিনের রিমান্ড শেষে আসামীদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত তিন আসামীর আরও আট দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: এমপি আনার হত্যা: ঢাকায় ফিরে যা বললেন ডিবি প্রধান
প্রসঙ্গত, রবিবার (১২ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সাথে দেখা করতে যান তিনি। পরের দিন, সোমবার (১৩ মে) চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আনার। সন্ধ্যায় ফির আসবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন আনার।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে কল করবেন। পরে তার সাথে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
বুধবার (১৫ মে) হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় সংসদ সদস্য আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সাথে আছেন। তাকে আর ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
শুক্রবার (১৭ মে) আনারের পরিবার তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, এমপি আনারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে আর্ এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: এমপি আনার হত্যার যৌথ তদন্ত সফল: ডিবি প্রধান
সোমবার (২০ মে) এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর শুক্রবার (১৭ মে) তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।
পরে বুধবার (২২ মে) ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে। খুনের পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। এনডিটিভি বলে, ১২ মে কলকাতায় আসার পর নিখোঁজ হওয়া সংসদ সদস্য আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরুর পর ২২ মে সকালে তার খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় কলকাতা পুলিশ।
এদিকে, সেদিনই ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন সংসদ সদস্য আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এমপি আনার সংসদ ভবন এলাকায় বসবাস করতেন। আর সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। তাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে।
এ ঘটনায় তদন্তে নামে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ও ডিবি পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্কে কিছু বিষয়ে সংসদ সদস্য আনারের ওপর রাগ ছিল তার বন্ধু ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের। ২০০ কোটি টাকার ভাগা বাটোয়ারা নিয়ে এমপি আনারকে খুন করা হয়। ইতোপূর্বেও একাধিকবার এমপি আনারকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন তার বন্ধু শাহীন।
আরও পড়ুন: পরিবারসহ দেশ ছাড়া বেনজীর, অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা
সবশেষ গুলশান এবং কলকাতার নিউমার্কেটে দুই দফায় এই হত্যাকাণ্ডের ছক কষা হয়। এরপর গত ১২ মে এমপি আনার কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য শিলাস্তির মাধ্যমে তাকে ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলা হয়। এরপর নিউটাউনের ফ্ল্যাটে এনে ১৩ তারিখ রাতে আনারকে খুন করা হয়।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয় হত্যার সাথে জড়িত থাকা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াসহ তিনজন আসামীকে। তাদের তিনজনকে আট দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে জিহাদ হাওলাদার নামের এক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। জিহাদের দেওয়া তথ্যমতে কলকাতার ওই ফ্ল্যাটটির সেপটিক ট্যাংক থেকে বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করে কলকাতার পুলিশ। সেগুলো সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের টুকরো বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এমএল/