আজ রাতেই সময় শেষ, মালয়েশিয়ায় যেতে টিকিট ছাড়াই বিমানবন্দরে হাজারো মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২১ অপরাহ্ন, ৩১শে মে ২০২৪

কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় শেষ হচ্ছে শুক্রবার (৩১ মে) মধ্যরাতে। ভিসা পাওয়া কর্মীদের আজকের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় পৌঁছতে হবে। আর এ কারণেই শেষ দিনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু এখনও কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া ফ্লাইটের টিকিট পাননি প্রায় ৩১ হাজার কর্মী। ফলে এসব কর্মীদের যাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মনিরুল ইসলাম কুষ্টিয়ার বাসিন্দা। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সকাল থেকেই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অপেক্ষা করছেন তিনি। এজেন্সি তাদেরকে দফায় দফায় সময় দিয়েও ফ্লাইটের টিকেট দিতে পারেনি। বলছে, টিকেটের দাম অনেক বেশি হওয়ায় তারা কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সর্বশেষ সন্ধ্যার একটি ফ্লাইটের টিকেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই টিকেটও তিনি এখনও হাতে পাননি।
মনিরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, দেশে ক্ষেতে খামারে কাজ করে কষ্ট করে সংসার চালাতাম। সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতেই ঋণ করে ও জমি বন্ধক রেখে বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। বিদেশে যেতে না পারলে কীভাবেই বা সংসার চালাব, আর ঋণই বা কীভাবে পরিশোধ করব?
আরও পড়ুন: যাঁরা মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, তাঁরাই মহৎ: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
শুধু মনিরুল ইসলাম নয়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। তারা বলছেন, আজকের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া আর কোনো শ্রমিক তাদের দেশে নেবে না। আজকের মধ্যে যেতে না পারলে তারা আর মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না। অনেক টাকা খরচ করেছেন, এখন বিদেশে যেতে না পারলে দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকবে না।
অসাধু চক্র তৈরি করে কর্মী পাঠানোয় অনিয়মের ঘটনায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দেওয়া হয়। তখন আবারও চক্র গঠন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর কোনো শ্রমিক নেবে না। যারা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাদের শুক্রবার (৩১ মে)র মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে।
কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) টাকা দেওয়া অসংখ্য মানুষ এখন বেশ বিপদে পড়েছেন। সময় আর হাতে না থাকায় উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই তারা এখন বিমানবন্দরে এসে ভিড় করেছেন।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের কাউকেও কোনভাবে আর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে শুক্রবারে পর বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কোনো কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। গত জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একই সাথে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সাথে এ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি পুনরায় করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, নেপাল, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী যায় মালয়েশিয়ায়।
আপাতত মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো ধরনের সুযোগ নেই। বুধবার (২৯ মে) মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাসনা মোহাম্মদ হাসিম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বিদেশি কর্মীদের প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
আর এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ছুটিতে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী কর্মীরাও। অন্যদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটগুলোর টিকিটের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। বর্তমানে লাখ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না একটি টিকিট।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ৩১ হাজার কর্মীর স্বপ্নভঙ্গ
বিমানবন্দরে অপেক্ষমান কর্মীদের অভিযোগ, এসব এজেন্সিগুলো টিকিট ম্যানেজের মিথ্যা আশা দিয়েও এখনও প্রতারণা করছে। আবার অনেকেই ফোন ধরছে না, কোনো যোগাযোগ করছে না। অনেককে আবার পরবর্তী ফ্লাইটের আশাও দেয়া হচ্ছে। ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট থাকা স্বত্তেও তারা আদৌ সেখানে যেতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। আবার এদের অনেকরই অভিযোগ টিকিট পাইয়ে দিতে তাদের কাছ থেকে তিনগুন পর্যন্ত টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি প্রবাসী কর্মীদের। তাদের দাবি, হয় সময় বাড়ানো হোক নতুবা তাদের মালয়েশিয়া টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
শুক্রবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে মালয়েশিয়ায়গামী তিনটি ফ্লাইট। রাত পর্যন্ত ছেড়ে যাবে আরও চারটি। এসব ফ্লাইটে দেড় হাজার কর্মী যেতে পারবেন।
এমএল/