শিশুকেন্দ্রিক বাজেট দেখতে চায় ইউনিসেফ ও শিশুরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৫ অপরাহ্ন, ৩রা জুন ২০২৪
ইউনিসেফ ও ‘বাংলাদেশ জেনারেশন পারলামেন্ট (জেনপি)’ উদ্যোগের সাথে যুক্ত শিশুরা জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত এক প্রাক-জাতীয় বাজেট ব্রিফিংয়ে শিশুকল্যাণের মূল খাতসমূহে বরাদ্দ বাড়ানো এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
সোমবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে এক প্রাক-জাতীয় বাজেট ব্রিফিংয়ে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ইউনিসেফ এ বছর পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটস এর সাথে যৌথভাবে ‘জাতীয় বাজেটে শিশুদের স্বার্থ রক্ষা: প্রাক-বাজেট ব্রিফিং’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিষয়ক বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের সদস্যবৃন্দ ও ইউনিসেফের (জেনপি)’ উদ্যোগ হতে প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ এই আয়োজনকে সমৃদ্ধ করে।
ইউনিসেফ ২০২৩-’২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ সংসদ সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করে, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা মতন গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ ও বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরা হয়। উপস্থাপনায় আসন্ন বাজেটে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুপারিশমালাও তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: অবশেষে কলকাতা যাচ্ছেন আনারকন্যা ডরিন
বাংলাদেশের আটটি বিভাগের প্রতিনিধিত্বকারী শিশুরা এই আয়োজনে অংশ নেয়। ব্রিফিংয়ে তারা তাদের সমবয়সীদের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে। কুড়িগ্রামের ১১ বছর বয়সী শিশু সাংবাদিক ওয়াইজ আবতী বলে, ‘আমরা যদি বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারি তাহলে সেটি আমাদের মতামত, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে বাধাগুলোর সম্মুখীন হই সেগুলো এবং তার সাথে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত চাহিদাগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, "প্রাক-বাজেট বিশ্লেষণে শিশুদের সম্পৃক্ত করার মানে হলো সক্রিয় নাগরিক গড়ে তোলা এবং এটি জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে তাদের মতামত যাতে শোনা হয় তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। এই উদ্যোগে ইউনিসেফের সহায়তা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক শাসন পদ্ধতি কায়েম করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে।”ব্রিফিং-এ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার উপরও জোর দেয়া হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় মোট বাজেটের আকার ১২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য বরাদ্দ আনুপাতিক হারে হ্রাস পেয়েছে, যা শিশুদের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরুপ।
শিশুদের জন্য সুচিন্তিত বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওয়াইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গ্যুয়েভা বলেন, “আমাদের শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ করা শুধুমাত্র একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয় – এটি একটি স্মার্ট অর্থনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে অনেক ভালো প্রতিদান পাওয়া যায়। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে শিশুদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া বাজেটের সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।”
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের পথে তাঁর যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
আইনসভার সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এবং পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপার্সন শামসুল হক টুকু, এমপি বলেন, “বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া এবং এর বাস্তবায়নে যাতে দেশের প্রতিটি শিশুর কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন থাকে তা নিশ্চিত করা নীতিনির্ধারক হিসেবে আমাদের কর্তব্য। আজকের আলোচনা সঠিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের পদ্ধতিগুলোর উন্নয়নে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্বের কথাই পুনর্ব্যক্ত করে।”
স্বাস্থ্য খাতে, বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা, ওষুধ ও সরঞ্জাম বাড়ানো এবং টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়ন বাড়ানোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আসন্ন জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
শিক্ষা খাতে, বাংলাদেশ লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণসহ প্রায় শতভাগ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে। শিক্ষা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পাঠ্যক্রম সংস্কার, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বিদ্যালয়গুলোকে তাপ প্রতিরোধী করার বিষয়ে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে, ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ শিশুদের জীবনের শুরুর বছরগুলোতে তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাংলাদেশ সামাজিক সুরক্ষা খাতে যৌক্তিকভাবে সম্পদ বিনিয়োগ করলেও, যাদের বিশেষ প্রয়োজন তাদের কাছে সেবা ঠিকমতন পৌঁছুচ্চে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে শাহবাগ থানা
এ ছাড়া ইউনিসেফ তরুণদের মতামতকে তুলে ধরার জন্য ২৮ হাজারের বেশি তরুণের মতামত নিয়ে একটি ‘ইউ-রিপোর্ট’ জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ মনে করে, শিশুদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয় করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগ, শিশুদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে এমন নীতি বিষয়ক সংলাপে তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউনিসেফের যে অঙ্গীকার তারই প্রমাণস্বরুপ।
এমএল/