কুষ্টিয়ায় সমাজসেবার কর্মচারীদের মানবেতর জীবনযাপন
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৪২ অপরাহ্ন, ৮ই জুন ২০২৪
গত ২ মাস যাবৎ কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের অধিনে কর্মরত প্রশিক্ষক-কর্মচারীদের দেওয়া হচ্ছেনা বেতন ভাতা। বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন পার করতে হচ্ছে তাদের। ২ মাস পার হলেও সমস্যা সমাধানে নেই তেমন কোন পদক্ষেপ ।
বিশস্ত সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের অধিনে প্রশিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষক মিলিয়ে ২৯ জন কর্মরত রয়েছেন। এ যাবতকালে নিয়মানুযায়ী প্রতি মাসে প্রশিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন, বোনাস, উৎসব ভাতা পেলেও বর্তমানে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসের বেতন, বৈশাখী ভাতা, ঈদ বোনাস কোন কিছুই পাননি তারা। শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা থাকলেও বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রশিক্ষক-কর্মচারীরা।
বিশস্ত সুত্রে আরো জানা যায়, চলতি বছরের ১লা এপ্রিল শহর সমাজসেবা অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম বদলী হলে ১ মাস হলো একজন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পদটিতে বসানো হয়। এরপর গত মে মাসের ১২ তারিখে সমাজসেবা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন মো. আরিফুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি সমাজসেবা অফিসার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। সমাজসেবা অফিসারের পদ ফাঁকা না থাকলেও বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এসব কর্মচারীরা।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় বিজিবির অভিযানে আড়াই কেজি কোকেন উদ্ধার
অন্যদিকে, জাপান টোব্যাকোর অর্থায়নে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া ১২ জন প্রশিক্ষকের সম্মানী পরিশোধ না করেই মাসের পর মাস ঘোরানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও ৩ মাস পূর্বে মাত্র ৮ হাজার টাকা করে পরিশোধ করা হয়েছে। যার কারনে জাপান টোব্যাকোর সাথে চলমান এই প্রকল্পের ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়াও সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের আওতায় শিশুদের জিরো সাইজ থেকে শুরু করে ৬ মাস পর্যন্ত পোশাক সরবরাহ প্রকল্পও ভেস্তে যেতে বসেছে। কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা অফিসের আওতাধীন এই প্রকল্পে প্রায় ১৫ জন বিধবা মহিলা কাজ করে জীবন যাপন করতেন। বর্তমানে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের কাজ বন্ধ হওয়ায় সাবলম্বী হওয়া ১৫ জন অসহায় বিধবা মহিলারা কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
শুধু তাই নয়, শহর সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০১৯ এর ১১(৩) অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক ১০ হাজার টাকা হাতে রাখাসহ সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবে। তবে পরবর্তী সভায় অনুমোদন নিতে হবে। নীতিমালা অমান্য করে ৫৪ তম ব্যাচের কয়েক লক্ষ টাকা এবং ৫৫ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে হাতে রেখে ব্যয় করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। যা গুরুতর অনিয়ম বলেও অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জাপান টোব্যাকোয় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা এক ব্যক্তি জানান, আমরা গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ১২ জন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে টাকা দেওয়ার কথা ছিলো তাও তাদের দেওয়া হয়নি। গত ৩ মাস আগে তাদের নামমাত্র ৮ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি এই ঈদের আগে তাদের টাকা পরিশোধ করলে তারা একটু স্বাবলম্বী হতো ৷তাদের মাসের পর মাস ঘুরানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় পরকীয়ার জেরে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৩
আরেকজন কর্মচারী জানান, আমাদের আগে প্রত্যেক মাসের বেতন মাসেই দিয়ে দেওয়া হতো ৷বোনাস সহ উৎসব ভাতাও পেয়ে যেতেন সময় মতো। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসের বেতন, বৈশাখী ভাতা, ঈদ বোনাস কোন কিছুই পাননি তারা। তারা বেতন বোনাস ছাড়া মানবেতর জীপন যাপন করছে। সামনে আবারও আরেকটি ঈদ চলে এসেছে। বেতন বোনাস না পেলে ঈদ করা হবেনা বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গে শহর সমাজসেবা অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, সমন্বয় পরিষদের নির্বাচন কেন্দ্রিক কিছু জটিলতা থাকায় এবং শহর সমাজসেবা কর্মকর্তার বদলিজনিত কারণে পদটি ফাঁকা হওয়ায় বেতন ভাতা পরিশোধে একটু বিলম্ব হয়েছে। বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য ইতোমধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। খুব শীঘ্রই তারা পেয়ে যাবেন।
বিষয়টি নিয়ে সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল লতিফ সেখের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি আমি জানি। সবাই বেতন এবং ভাতা ঈদের আগেই পেয়ে যাবে।
এমএল/