বোরির গবেষণার জন্য সৈকতের ২.৯১ কিলোমিটার ‘সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৪২ অপরাহ্ন, ৮ই জুন ২০২৪
বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া সৈকতের ২.৯১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বোরি’র ‘সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। যা ‘বোরি বিচ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
‘Awaken New Depths’ বা ‘সমুদ্রের বিষয়ে নতুন করে জাগ্রত করা’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচিতে এমন ঘোষণা দেয়া হয়। আর বোরি’র এ সৈকতটি উদ্বোধন করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।
শনিবার (৮ জুন) সকালে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে সৈকত পরিচ্ছন্নতা অভিযান দিয়ে সূচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: সাজেকে ৫ শতাধিক পর্যটক আটকা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর বোরির সম্মেলন কক্ষে সেমিনার, ওশান অলিম্পিয়াড, বৃক্ষরোপন, থ্রীডি মুভি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
বোরির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল মো. খুরশেদ আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেনু কুমার দে, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
সমুদ্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, বিজ্ঞানী ড. নওশাদ হক ও ড. আফতাব আলম খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, এবারের সমুদ্র দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণের মধ্যে সমুদ্রের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা, সমুদ্র পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করা।
আরও পড়ুন: তীব্র স্রোতে ভাঙছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক
সামুদ্রিক মৎস্য, পর্যটন, উপকূলীয় জলজ উদ্ভিদ-প্রাণী, তেল, গ্যাস, খনিজ পদার্থ, ওষুধসহ আরো অনেক সম্পদ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলী হোসেন বলেন, সমুদ্র সম্পদের টেকসই আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখার জন্য আমাদের ভালো সুযোগ আছে। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট জাতীয় কৌশল পূরণ এবং আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
এসময় সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী ও সংস্থাকে একসাথে কাজ করে আমাদের সমুদ্র ও সমুদ্র সম্পদকে রক্ষার আহবান জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব মো. খুরশেদ আলম বলেন, সমুদ্র নিয়ে গবেষণার জন্য সরকার নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। উন্নয়নের জন্য সমুদ্র নিয়ে আরো বেশি পড়াশোনা ও গবেষণা দরকার।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে শ্রেষ্ঠ সার্কেল রাসেল, ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি
শুধুমাত্র সৈকত পরিচ্ছন্নতা অভিযান নয়, সমুদ্রের সমগ্র বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকে জানাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হতে হবে। এক কথায় মানুষকে বাঁচতে হলে সমুদ্রকে টিকিয়ে রাখতে হবে এবং এর কোন বিকল্প নেই।’
কর্মসূচীর সবশেষে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া সৈকতের ২.৯১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বোরি’র গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। যা ‘বোরি বিচ’ নামে পরিচিত হবে। আর বোরি’র এ সৈকতটি উদ্বোধন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।
যেখানে কাছিম, রাজকাঁকড়া ও শামুক-ঝিনুকসহ সমুদ্র উপকূলের নানা প্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সমুদ্রের ভাঙ্গা-গড়া পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে জাল পেচানো জেলের মরদেহ উদ্ধার
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এটি পরীক্ষণমূলক কার্যক্রম হিসেবে পরিচালিত হলেও সফলতার ভিত্তিতে দেশের সব সমুদ্র এলাকাকে কিভাবে সংরক্ষণ করে জনস্বার্থে ব্যবহার করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এমএল/