যক্ষ্মা রোগী বেশি ঢাকায়, কম ময়মনসিংহে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


যক্ষ্মা রোগী বেশি ঢাকায়, কম ময়মনসিংহে

যক্ষ্মা জীবাণুঘটিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা মাইকো-ব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক জীবাণু দিয়ে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে।

দেশে গত এক বছরে (২০২১ সাল) সর্বোচ্চ যক্ষ্মা রোগী ৮০ হাজার ১৩৭ জন শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সর্বনিম্ন ১৯ হাজার ৪৭ জন শনাক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিভাগগুলোর মধ্যে বরিশালে ২১ হাজার ৪৮১, চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ২২, ঢাকায় ৮০ হাজার ১৩৭, খুলনায় ৩৯ হাজার ৭৯৬, ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৪৭, রাজশাহীতে ২৯ হাজার ৩৩৫, রংপুরে ৩১ হাজার ৭০৮ ও সিলেটে ২৫ হাজার ৯১৮ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে নতুন মোট ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৪৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগে আনুমানিক মৃত্যু ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন, যা ২০২০ সালে কমে প্রতি লাখে ২৭ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসা নিরাময়ের হার গত ১০ বছর যাবত ৯৫ শতাংশের বেশি, যা ২০২১ সালে ছিল ৯৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২১ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন প্রায় ২৮ লাখের বেশি লোকের পরীক্ষা করা হয়েছে। গত দশকে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট-২০২০ অনুযায়ী, ২০২০ সালে সকল প্রকার যক্ষ্মা রোগীর অনুমিত সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার জন। তবে, ওই বছরে সকল প্রকার শনাক্তকৃত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৮৮০ জন। বছরটিতে যক্ষ্মায় মৃত্যুর অনুমিত সংখ্যা ৪৪ হাজার। এবং ২০২০ সালে নতুন এমডিআর টিবি রোগীর অনুমিত সংখ্যা তিন হাজার ১০০ জন।

চিকিৎসকদের মতে, জন্মগতভাবেই দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ যক্ষ্মার জীবাণু বহন করে। তবে বাহক এই রোগে আক্রান্ত হবে বিষয়টি এমন নয়। জীবাণুর ধারক নিজে আক্রান্ত না হলেও তার মাধ্যমে অন্যের শরীরে যক্ষ্মা ছড়াতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এই জীবাণুতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরই এই রোগ বেশি হয়। এছাড়া পরিবেশ দূষণ, দরিদ্রতা, মাদকাসক্তি, অপুষ্টি যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশ জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ড. আবদুল্লাহ মেহেদি গণমাধ্যমকে জানান অনেকে মনে করে এই রোগ শুধু ফুসফুসে হয়। এটা ঠিক নয়। এটি দেহের যে কোনো স্থানে হতে পারে। তবে যক্ষ্মা হয় না, শরীরে এরকম অঙ্গ খুব কমই আছে। ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, বৃক্ক, মস্তিষ্ক ও এর আবরণী, অন্ত্র, হাড় এমনকি ত্বকেও হতে পারে যক্ষ্মা। তবে ফুসফুসে যক্ষ্মা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, যা শতকরা ৮৫ শতাংশ। শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে সেই অংশটি ফুলে উঠবে। ফুলে ওঠা অংশটি খুব শক্ত বা একদম পানি পানি হবে না, সেমি সলিড হবে। ফোলার আকার বেশি হলে ব্যথাও হতে পারে।

‘সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে যক্ষ্মা পুরোপুরি সেরে যায়, তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। যদি শরীরের কোনো অংশ ফুলে ওঠে আর কয়েকদিনেও ফোলা না কমে, এছাড়া ফুসফুসে যক্ষ্মার লক্ষণগুলোর মধ্যে হাঁচি-কাশি বাদে বাকি লক্ষণগুলোর কোনো একটি দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত কি না।’

তিনি আরও বলেন, রোগটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় অনেকদিন ওষুধ খেতে হয়। যেটা ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত হয়।

চিকিৎসকদের দেওয়া এই ছয় থেকে নয় মাসের ওষুধ ও চিকিৎসা নিরবচ্ছিন্নভাবে শেষ করার পরামর্শও দেন তিনি।

ওআ/