ভয়াল কালো রাত পঁচিশে মার্চ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ভয়াল কালো রাত পঁচিশে মার্চ

২৫ মার্চ! বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি ঘৃণ্য ও কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন৷ ১৯৭১ সালের এই ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বাংলাদেশের তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ওপর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালায় পকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই ভয়াবহ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করে বাঙালি জাতি। পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’র নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বিশ্বের ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা মেতে উঠে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে চালানো এই গণহত্যাই বিশ্বের ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। পোড়া মাটি নীতি নিয়ে নেমেছিলো পাকিস্তানি ঘাতকরা। একটি জনগোষ্ঠীর স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে ঢাকায় চালানো ওই হত্যাযজ্ঞের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। বাঙালি জাতির জীবনে আজ এক বিভীষিকাময় বেদনাবিধুর রাত। ১৯৭১ সালের আজকের রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ বাঙালির ওপর যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঘৃণ্যতম গণহত্যার নজির হয়ে আছে।

১৯৪৭ সালের পশ্চাতপদ দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে পাকিন্তান নামের যে রাষ্ট্রের জন্ম সেই রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুরুতেই পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার নির্যাতন, শোষণ চালাতে থাকে। এই শোষণ অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুরুতেই প্রতিবাদ করতে থাকে বাঙালি জাতি। ধরাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন সামনে চলে আসে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ করে ইয়াহিয়া খানের ঘোষণায় ৩ মার্চ জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করা হলো। আপামর জনতা বিদ্রোহ-ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসমাবেশে পতাকা উত্তোলন। ৩ মার্চ ঘোষণা হলো পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার, জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। বহুপ্রতীক্ষিত ৭ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অসহযোগ আন্দোলন, যুদ্ধের প্রস্তুতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন সকালে পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ৪৫ মিনিট ধরে বৈঠক করেন। রংপুর, সৈয়দপুরও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিতে ১১ জন নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে পাট ব্যবসা ও টেলিযোগাযোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরকারের অতিরিক্ত কালক্ষেপণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে। ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিন গানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

২৫ মার্চ। সন্ধ্যা থেকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি। সেই দুঃসময়ের স্মৃতিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে: আগুন জ্বলছে পলাশীর বস্তিতে, বিদ্রোহ ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে, দাউদাউ করে জ্বলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। সেই রাতে ঢাকাবাসী নিরীহ বাঙালি সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঠিক সেই সময়ই ভয়ংকর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। হিংস্র শ্বাপদের মতো জলপাই রঙের ট্যাংকগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ-ইপিআর ব্যারাকের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ-ট্রাক বোঝাই করে নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্যরা ট্যাংকসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। মুহুর্মুহু গুলিতে বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডবে তখন মত্ত পাকিস্তানি বাহিনী। হতচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়তে থাকে মৃত্যুর কোলে। রাতের শেষ প্রহরে কামানের গর্জন। আগুনের ফুলকি চতুর্দিকে। সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার নির্দেশে, জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামের সামরিক অভিযানে সংঘটিত হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। জাতিসংঘের ঘোষণায় ‘জেনোসাইড’-এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন হয়েছে সেদিন বাঙালির ওপর। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল, জহুরুল হক হলসহ সারা ঢাকা শহরে তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালি জাতির ওপর ২৫ মার্চ বর্বর সশস্ত্র হামলা ও গণ হত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। রচিত হয় এক কুখ্যাত ইতিহাস। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির উপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই দিন রাত থেকেই আধুনিক অস্ত্রশন্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে বাঙালি রাস্তায় নামে। শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে নানাভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা থেকে পুলিশ ও ইপিআর এর বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্ত্র ধারণ করে রাস্তায় নামে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নামে। ২৫ মার্চ কালো রাতে শুরু হওয়ার পর পরই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

২৬ মার্চ সকালে ঢাকা থেকে বের করে দেওয়া হয় বিদেশি সাংবাদিকদের; যাতে করে কেউ গণহত্যার কোনো সংবাদ পরিবেশন করতে না পারেন। পাকিস্তানিদের অপারেশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং জগন্নাথ হলের ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের বহু সংখ্যক শিক্ষক ও সাধারণ কর্মচারীদেরও হত্যা করা হয়৷ পুরোনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও চালানো হয় ব্যাপক গণহত্যা৷ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করে হত্যা করা হয় পুলিশ বাহিনীর বহু সদস্যকে৷ পিলখানার ইপিআর-এর কেন্দ্রে আচমকা আক্রমণ চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয় নিরস্ত্র সদস্যদের৷ কয়েকটি পত্রিকা অফিস ভস্মীভূত করা হয়৷ দেশময় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বিচারে হত্যা করা হয় বিভিন্ন এলাকায় ঘুমন্ত নর-নারীকে৷ ধারণা করা হয়, সেই কাল রাতে কেবল ঢাকা ও তার আশে পাশের এলাকাতে প্রায় এক লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷

আর্চার ব্লাডের লেখা দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হওয়ার সময় মেশিনগানের গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। ২৬ মার্চ সকালের দিকে সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুম ও ৮৮ ইউনিটের মধ্যে যে কথোপকথন হয় তার রেকর্ড থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই অগণিত ছাত্রছাত্রী নিহত হয়েছিলেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নূরুল্লার ধারণকৃত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ছাত্রদের দিয়েই জগন্নাথ হলের মাঠে গর্ত খোঁড়া হচ্ছে, আবার সেই গর্তেই ছাত্রদের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। অনেক ঘরবাড়ি ও পত্রিকা অফিস, প্রেসক্লাবে আগুন ধরিয়ে, কামান ও মর্টার হামলা চালিয়ে সেগুলো বিধ্বস্ত করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় শাঁখারীপট্টি ও তাঁতীবাজারের অসংখ্য ঘরবাড়িতে। ঢাকার অলিগলিতে, বহু বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হত্যাকাণ্ড শুরুর প্রথম তিন দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া ও অন্যান্য শহরে লাখ লাখ নর-নারী ও শিশু প্রাণ হারায়। ঢাকার প্রায় ১০ লাখ ভয়ার্ত মানুষ গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ২৫ মার্চের গণহত্যা ছিল জঘন্যতম গণহত্যার সূচনামাত্র। 

সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তানি নর ঘাতক জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত্রি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে অপারেশন সার্চলাইটে নিহত ও বর্বরোচিত হামলা ও সেই নৃশংস ঘটনায় আক্রান্তদের স্মরণে ২০১৭ সালের ১১