তপু হত্যার নেপথ্যে মাদক, গ্রেফতার দুইজনের স্বীকারোক্তি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, ২৫শে জুন ২০২৪


তপু হত্যার নেপথ্যে মাদক, গ্রেফতার দুইজনের স্বীকারোক্তি
ছবি: প্রতিনিধি

পাবনার ঈশ্বরদীতে মাদক সেবন ও বিভিন্ন ছাত্রাবাসে মাদক বিক্রয়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে রুমে আটকিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে গিয়েই উত্তেজিত হয়ে বন্ধু তপু হোসেনকে (১৪) হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর সোমবার (২৪ জুন) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্ধিতে এসব তথ্য জানিয়েছে জয়নাল আবেদিন জয় (২০) ও ঈশা খালাশী (১৯)।


মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মশুরিয়াপাড়ার রিকসাচালক আবুল কাশেম প্রামানিকের ছেলে তপু ও একই এলাকার রাজন খালাশীর ছেলে ঈশা খালাশীকে দিয়ে বিভিন্ন ছাত্রাবাসে মাদক বিক্রি করাতো মাতৃছায়া ছাত্রাবাসের মালিক মো. আলি হোসেন হাসু।


আরও পড়ুন: পাবনায় পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে দুইভাইসহ ৩ বন্ধুর মৃত্যু


স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী কিছু নেতাদের ছত্রছায়ায় হাসু মাদক কারবার চালিয়ে আসছিল। বিষয়টি জানার পর তপুর বাবা আবুল কাশেম নিজের ছেলে তপুকে মারধর করে। সেই সঙ্গে মাদক কারবারিদের কথা বলার জন্য চাপ দেন। পরবর্তীতে ১৫ জুন আলী হোসেন, সোহেল, ঈশা খালাশী ও কক্ষে ভাড়া থাকা জয়নাল পরিকল্পনা করে অপহরণ ও জিম্মির নাটক সাজিয়ে তপুকে অরণ্য ছাত্রাবাসে ডেকে নিয়ে হত্যা করে।


পরে তারা তপুর মরদেহ একটি ট্রাংকে রেখে পালিয়ে যায়। হত্যার আলামত নষ্ট করতে তারা ব্যবহৃত ছুরি পরিস্কার করে রাখে এবং হত্যার সময় রক্ত লেগে যাওয়া চাদরটি পুড়িয়ে ফেলে। এরপর তপুর মোবাইল ফোনটি শহরের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে জয় ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে তপুর বাবা আবুল কাশেমের কাছে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা চায় পরে সূত্র জানায়।


থানা সূত্র জানায়, তপু নিখোঁজ হলে তার মা মজিরন বেগম বাদী হয়ে ১৬ জুন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ঈদের ছুটির পর অরণ্য ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে আসলে পাশের কক্ষ থেকে বের হওয়া দূর্গন্ধ ও রক্ত দেখে মালিকের মাধ্যমে বিষয়টি থানায় জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ছাত্রাবাসে গিয়ে তালা ভেঙ্গে কক্ষের ট্রাংকির ভিতরে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।


আরও পড়ুন: পাবনায় সময় টিভির প্রতিনিধির বাড়িতে বিএনপি কর্মীদের হামলা-ভাংচুর


নিহত তপুর বাবা হত্যা মামলার বাদী মো. আবুল কাশেম প্রামাণিক জানান, তার ছেলেকে হত্যার পেছনে মাতৃছায়া ছাত্রাবাসের মালিক দোকানদার মো. আলি হোসেন হাসু জড়িত। কিন্তু দাবীর প্রেক্ষাপটেও হাসুকে মামলার আসামি করেনি পুলিশ।


আলি হোসেনকে আসামি না করার জন্য ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি থানায় জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কারনেই মামলায় হাসু ও তার মাকে আসামী করা হয়নি বলেও জানান তিনি।


এ সময় আলি হোসেন হাসু পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তপুর বাবার মাথার ঠিক নেই। উনি অনেক অভিযোগই নিয়ে আসতে পারেন। হত্যায় যারা জড়িত তাদের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


আরও পড়ুন: পাবনায় মাদক ব্যবসায়ী সম্রাটের নেতৃত্বে মিলনকে কুপিয়ে আহত


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম জানান, হত্যাকারীরা তপুকে প্রথমে জিম্মি করে পরিবারের নিকট থেকে অর্থ আদায় করতে চেয়েছিল। কিন্তু তপু জোরাজোরি করায় তাকে হত্যা করেছে। তদন্ত করে হত্যায় তিনজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাই মামলায় হাসু ও তার মাকে আসামি করা হয়নি। পলাতক আসামি সোহেলকে গ্রেফতারের পর নতুন কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। তখন হত্যার পেছনে আরো কোনো কারণ আছে কিনা পরিষ্কার হওয়া যাবে। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


এমএল/