বৃষ্টি না থাকলেও পানি নামছে ধীরগতিতে: ক্ষত চিহ্নের সাথে জনদুর্ভোগ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:২৭ অপরাহ্ন, ১৩ই জুলাই ২০২৪


বৃষ্টি না থাকলেও পানি নামছে ধীরগতিতে: ক্ষত চিহ্নের সাথে জনদুর্ভোগ
ছবি: প্রতিনিধি


কক্সবাজারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোন বৃষ্টির দেখা মিলেনি। রোদেরও দেখা মিলেছে। কিন্তু তারপরও টানা ভারী বর্ষণে আটকে থাকা পানি নামছে ধীরগতিতে। পানি কিছুটা নামার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। তলিয়ে যাওয়া বসত ঘরে রান্নার কোন সুযোগও নেই। রাস্তা ঘাটে এখনও রয়েছে পানি। যেখানে কমছে যে সব রাস্তাও চলাচল উপযোগি না। বন্ধ দোকান, বিকল হয়েছে আয়ের একমাত্র উৎস ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক (টমটম)ও। ফলে জনদুর্ভোগের কবলে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ।


শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা মিলে এমন দৃশ্যের। বিমান বন্দরের পশ্চিম-উত্তরে এই ওয়ার্ডটি ঘীরে সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, বাসিন্যাপাড়া, ফদনারডেইল, নাজিরারটেক সহ কয়েকটি গ্রাম। যে গ্রামগুলো গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা দু’দিন ভারী বৃষ্টিপাতে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে বৃহস্পদতবার একদিনেই বৃষ্টিপাত হয় ৩৩৪ মিলিমিটার। শুক্রবার আরও ৮৬ মিলিমিটার। আর এই বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরেরেএক নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও জেলার ব্যাপক এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। শুধুমাত্র এক নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকার ৬ হাজারের বেশি মানুষ হয়ে পড়েন পানিবন্দি।


শনিবার বৃষ্টি না থাকায় পানিবন্দি গ্রামগুলোতে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করলে দুর্ভোগের কোন শেষ নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, সহায়তা না করে সেলফি তুলে দায় সারছেন অনেক জনপ্রতিনিধি।


পূর্ব-মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ার বাসিন্দা ছলিমা খাতুন বলেন, পানিতে ভেসে বসতি। এখন পানি নামছে আর মাটি দিয়ে বসতি উচু করছি। এখনো কোন খাওয়া-দাওয়া হয়নি।


মাস্টার কামাল হোসেন বলেন, চলাচলের রাস্তা পরিণত হয়েছে খালে। পানির কারণে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। পানিতে মসজিদ ডুবে যাওয়া নামাজও পড়া যায়নি। এখন বসতি থেকে পানি নামছে আর ঘর-বাড়িগুলো ঠিক করছি।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে পাহাড়ধসে শিশুসহ নিহত ২


রহিমা বেগম বলেন, রান্না চুলা পানিতে ভেসে গেছে। গত ২ দিন রান্না হয়নি। কিছু শুকনো খাবার কিনে এনে দিনযাপন করছি।


ইজিবাইক চালক হুমায়ুন বলেন, পানিতে ইজিবাইকের মটর নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে ইজিবাইক চালানো যাচ্ছে না। আর ইজিবাইক ঠিক করলেও রাস্তা তো ক্ষত-বিক্ষত, পানিতে ডুবে রয়েছে প্রধান সড়কে যাওয়া যাবে না। আয়ের একমাত্র উৎস বন্ধ, কি করব কিছুই ভাবতে পারছি না।


সরেজমিন পূর্ব-মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়ায় দেখা যায়, পানি নামতে শুরু করলেও বসতিগুলো হচ্ছে না রান্না। যার কারণে অনাহারে রয়েছেন অনেকেই। আবার অনেকেই নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করছেন বসতি মেরামতের। ভুক্তভোগীদের দাবি, সহায়তা নিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না। শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধিরা সেলফি তুলে দায় সারছেন।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জনসচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত


মো. আনিছ কুতুবী বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি। অনেকের ঘরে রান্না চুলা নেই বললেই চলে, যা পানিতে ভেসে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে অনেক জনপ্রতিনিধি দেখতে এসেছিলো। অনেক সেলফি ও ছবি তুলে চলে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত কোন মানুষের খবর নিচ্ছে না। কোন ধরণের সহায়তা করছে না।


রাবেয়া বেগম বলেন, আমরা দুর্ভোগে আছি কিন্তু কাউন্সিলর কোন খবরও নিল না। কিছু সহায়তাও করল না। শুধুমাত্র কাউন্সিলরের স্ত্রী এসে পরিস্থিতি দেখে গেছে। আমাদের কষ্টে দেখি সবাই ছবি তুলতে আসে কিন্তু সহযোগিতা করতে নয়।


তবে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, পানিবন্দি হয়ে পড়ার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত পানি যাওয়ার যে নালা, ছড়া ও খালগুলো ছিল তা দখল কিংবা সরু হয়ে গেছে। যার কারণে পানি আটকে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। এবার নালা, খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রবিবার থেকে অভিযানে নামবে পৌরসভা। এতে জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।


মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা আজকের মধ্যে হয়ে যাবে। আর রবিবার থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল, টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে।


এদিকে, বৃষ্টিতে সৃষ্ট কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোন কলাতলী এলাকা থেকে শহরের অন্যান্য এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। ওখানেও সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন পৌর মেয়র।


জেবি/এসবি